সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ জওশন আরা রহমান ১৯ অক্টোবর ১৯৩৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামের সম্ভ্রান্ত বংশ "মুন্সেফ পরিবারে" জন্মগ্রহন করেন।
শিক্ষা জীবনঃ ১৯৫২ সালে চট্টগ্রামের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন। মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের আগেই ১৯৫২ সালের ১০ অক্টোবর "একুশের প্রথম প্রহরের কবি" নামে সকলের কাছে পরিচিত একুশে পদক প্রাপ্ত চট্টগ্রামের রাউজানের কৃতি সন্তান কবি ও সাহিত্যিক মাহবুবুল আলম চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর নিয়মিত লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে। তারপর ভর্তি হন তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি ১৯৫৫-১৯৫৬ সালে কলেজের ছাত্র সংসদের সদস্য মনোনীত হন। ১৯৫৭ সালে কলেজের বার্ষিক ম্যাগাজিন "অণ্বেষা" সম্পাদনা করেন। এবং একই বছর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রী সংসদের চট্টগ্রাম জেলা শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। সমাজকল্যাণ বিভাগে কর্মরত অবস্থায় তিনি ১৯৬৪-১৯৬৫ সালে কলম্বোপ্লান স্কলারশিপ নিয়ে দুই বছরের জন্য নিউজিল্যান্ডে যান। তিনি ওয়েলিংটনের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে সোস্যাল সায়েন্স বিষয়ে পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে কর্মরত অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইন্সটিটিউট অব সোস্যাল ওয়েলফেয়ার বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্ম জীবনঃ জওশন আরা রহমান ১৯৬০ সালে সমাজকল্যাণ অফিসার হিসেবে যোগ দেন সমাজকল্যাণ বিভাগে। ১৯৬০-১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১৮ বছর চাকরি করেন সমাজকল্যাণ বিভাগে। ডিপুটি ডাইরেক্টর হিসেবে ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ সমাজকল্যাণ "মাদার্স ক্লাব" প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৯ সালে দাতা সংস্থা ইউনিসেফে নারী উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তিনি উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সভা-সেমিনার ইত্যাদিতে যোগ দেওয়ার জন্য আমেরিকা, ইংল্যান্ড, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং এশিয়ার প্রায় ৩০টিরও অধিক দেশ ভ্রমণ করেন। ইউনিসেফে ১৯৯৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছর কাজ করার পর তিনি ইউনিসেফ থেকে অবসরে যান।
সামাজিক জীবনে জওশন আরা রহমানের ভূমিকাঃ বর্তমানে জওশন আরা রহমান নারী ও সমাজ উন্নয়নের ভূমিকা রাখছেন। তিনি ১৯৯৭-২০০২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ পাঁচ বছর মেয়াদি ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর চিলড্রেন(NAPFC) প্রণয়নের দলনেতা হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নারী উন্নয়ন ও পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় 'শিশু উন্নয়ন' ম্যাক্রো চ্যাপ্টার সংযোজনে তিনি অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়াও তিনি গ্রামীণ ট্রাস্টের উপদেষ্টা, গ্রামীণ শিক্ষা পরিচালনা পরিষদের সদস্য, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য, ট্রেজারার ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের স্পন্সরশিপের প্রকল্প এডুকেশন ওয়াচ রিপোর্টের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে নিজেকে যুক্ত রাখেন।
তাঁর জীবনের এই সুদীর্ঘ সময়ে নারী উন্নয়ন এবং শিশু অধিকার বিষয়ে তার বিভিন্ন লেখা দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়। তার স্মৃতিকথা 'একটি অজানা মেয়ে' সুললিত ভাষায় লেখা সমাজ, অর্থনীতি, জীবন প্রবাহ, সংগ্রাম, যুদ্ধ, পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতা, নারী জাগরণ, হিন্দু-মুুসলমান সংঘাতসহ বিচিত্র বিষয়ের এক অনবদ্য দলিল। এই নিবেদিতপ্রাণ সমাজকর্মী, বাংলাদেশের নারী সমাজকে উন্নয়নের জন্য সারাজীবন নিরলস পরিশ্রম করা অনন্য নারী জওশন আরা রহমান ২০১৬ সালে "An Unknown Women" নামে একটি বই লিখেছেন। যে বাংলাদেশসহ এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে সাড়া ফেলেছে। যেখানে বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীর নারীদের জীবন ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে। বইটির মোড়ক উন্মোচনের দিন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। চিফ গেস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক এর প্রতিষ্ঠাতা এবং উনার দীর্ঘ সময়কালের সহকর্মী স্যার ফজলে হাসান আবেদ। উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এম্বাসেডর মার্শা বার্ণিকাট, প্রফেসর ইমেরিটাস রফিকুল ইসলাম, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক, নারী নেত্রী ও অনন্যা পত্রিকার সম্পাদক সেলিনা হোসেন।
Make sure you enter the(*)required information