প্লে মেকারকে (play maker / লড়াকু খেলোয়াড়) একটা খেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রাখতে হয়। কারণ তিনিই খেলার প্রধান সংগঠক। ফুটবল খেলায় মিডফিল্ডার, ক্রিকেট খেলায় অলরাউন্ডার। খেলার প্রত্যেক অবস্থানে খেলার যোগ্যতা থাকার পাশাপাশি দলের সংকটাপন্ন অবস্থান থেকে সফলতাকে ছিনিয়ে আনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব একজন দক্ষ অলরাউন্ডার মিডফিল্ডারের আসল পরিচয়। কিভাবে খেলা পরিচালিত হবে, কাকে কিভাবে খেলানো দরকার, সর্বোপরি সামর্থ্য বিবেচনা করে একজন খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সফলতাকে নিশ্চিত করাই তার দায়িত্ব। সে যে-ই দলে থাকবে সেই দলের সফলতা নিশ্চিত। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ফুটবলের হাজারো কিংবদন্তি উপহার দিয়েছে তেমনি চুনতির উর্বর মাটি যুগে যুগে গুণীজনের আবির্ভাব ঘটিয়েছে, যারা সমাজে তথা দুনিয়ার মানুষের কল্যাণে তাদের জীবনকে উৎসর্গ করেছে। আমার মেজো মামা জান্নাতবাসি আহমদ সৈয়দ (আহমুদু মামা) সাহেব তাদের মধ্যে অন্যতম। উনার কর্ম শৈলীর নৈপুণ্যতা প্রদর্শন করেছিলেন চুনতি মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ) এর 'উপকমিটি' সম্প্রসারণের মাধ্যমে। আশিক ও মাসুক, মামার দুই ছেলে মামার নির্দেশকৃত পথেই হাঁটছে। আশিক আমার ভাই ও বন্ধু, আর মাসুক আমার অতি স্নেহের ছোট ভাই। সম্ভবত ১৯৯৯ বা ২০০০ সাল, মামার সাথে আমার সখ্যতা চট্টগ্রাম মেডিকেলের ICU তে। হয়তো আপনি ভাবছেন মামার সাথে আবার সখ্যতা! 'হ্যাঁ' ঠিকই। মামা এতবেশী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ ছিলেন উনার সাথে কথা বলাতো দূরের, সামনে পর্যন্ত পরার সাহস ছিলোনা। এটা ছিল মামার চতুর্থতম হার্ট অ্যাটাক। আশিক ও আমি পালা করে মেডিক্যালে মামার কাছাকাছি থাকতাম প্রায় এক থেকে দুই মাস যাবত। আমার ভাবতেই অবাক লাগতো একজন সফল কর্মবীর, ব্যবসায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, দক্ষ সমাজ সেবক, অসহায় ও দুস্তের সাহায্যে এক নিবেদিত প্রাণ মানুষ আমার পাশে ICU র মধ্যে মৃত্যুর কাছাকাছি অবস্থান করছে । সময়টা মামার সাথে ছিলোনা। আর্থিক, মানসিক এবং শারীরিক ধকল অকালে মামাকে এখানে নিয়ে এসেছিল।সপ্তাহ দু এক পেরোতেই মামাকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হলো। বেশি কথা বলা নিষেধ থাকলেও মামা সহ মামার রুগী বন্ধুদের গল্পের অন্ত ছিল না! উনার স্ট্রোকের আগে কিছু সাপ্লাই এর কাজ পেয়েছিলেন, খুব সম্ভবত আশিক অনার্স-মাস্টার্স পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। তাই মামার সামনে আমিই একমাত্র মানুষ যাকে দিয়ে অসমাপ্ত কাজ করিয়ে নেয়া যায়। আমি কিন্তু উনার উক্ত কাছে জন্য একজন অযোগ্য মানুষ। তবুও মামার দক্ষ দিকনির্দেশনা উক্ত কাজ আমাকে দিয়ে সম্পন্ন করানো হলো। আল্লাহর অশেষ রহমতে মামা মাস তিন একের মধ্যে সেরে উঠলেও মামার হার্ট আগের মত ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য দৌড়াদৌড়িতে সঙ্গ দিচ্ছিলো না। মামা বলতেন ICU তে থাকাকালীন একরাতে স্বপ্নে দেখলেন চুনতির শাহ সাহেব কেবলা উনাকে এসে বললেন সিরত মাহফিলের দাওয়াত মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে দিয়ে আসতে। উনি সুস্থ হওয়ার পর শহর থেকে চুনতি চলে গেলেন এবং সিরত মাহফিলের কাজে সর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। মামার কলম আর মেধা খোলা তরবারির মত ছিল। আশেপাশে যাদেরকে দিয়ে মাহফিলের দাওয়াতের কাজে লাগানো যায় সে কল্পে স্বেচ্ছাসেবী দল সংঘটিত করতে লাগলেন। এলাকার সমর্থবান ব্যক্তি, প্রবাসীদের ঘরে, ঘরে না পেলে টেলিফোনে মামা, নেজাত ভাই, মধু ফকির ও আমি সহ মাহফিলের দাওয়াত পৌঁছাতে লাগলেন। আশেপাশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, মসজিদের ইমাম ও খতিবদের কাছে নিজ হাতে চিঠি লিখে তা বিতরণ ও যাতায়াতের খরচের জন্য অতি কাছের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে মাহফিলের জন্য অগ্রিম চাঁদা ও ঋণ সংগ্রহ করে নিজের ও স্বেচ্ছাসেবকের যাবতীয় যাতায়ত খরচের আনজাম দিতে লাগলেন। এক পর্যায়ে খুব সম্ভবত ২০০১-২০০২ সালের দিকে মামা, আমি ও মধু ফকির হারবাং নিবাসী মামার আপন মামাত ভাই জনাব শওকত সাহেবের 'হোটেল ইনানী'র নিকটস্থ খামার বাড়িতে উপকমিটির আইডিয়ার সূত্রপাত হয়। সেই দিন আসার পথে আজিজনগরে কওমি মাদ্রাসা ও চুনতি ডেপুটি বাজারের মধু কোম্পানির অফিসে প্রথম উপকমিটির জন্য আলোচনা হয়। পরবর্তীতে নেজাত ভাই, মামা, মধু ফকির ও মাঝেমধ্যে আমিসহ চুনতি ইউনিয়ন ও পার্শবর্তী এলাকায় উপকমিটির কার্যক্রম চলতে থাকে। মামার দূরদর্শী পদক্ষেপ ও সাংগঠনিক দক্ষতা 'চুনতি সিরত মাহফিল উপকমিটি'কে একটি সতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তীতে মামার বিচক্ষণতা ও নেজাত ভাইয়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সারা বাংলাদেশে ঐ কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। মামার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত চুনতির শাহ সাহেব কেবলা (রহঃ) এর প্রবর্তিত '১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরতুন্নবী (সঃ)' এর যাবতীয় কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিলেন। আল্লাহ আমার 'আহমুদু মামা'কে নবীজির রহমতের পতাকাতলে জায়গা করে দিন।প্রফ রিড়ারঃ ফারিয়া মরিয়াম
Make sure you enter the(*)required information