ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক চুনতী সিরাতুন্নবী (স:) মাহফিল এর প্রবর্তক হযরত মওলানা হাফেজ আহমদ শাহ সাহেব কেবলার একমাত্র পুত্র সন্তান মরহুম শাহজাদা জামাল আহমদ।ওনার কিছু স্মৃতি নিয়ে লিখছি আজ। একদিন দুপুরে শ্রদ্ধেয় জামাল ভাই আমাদের ঘরে । আমাদের দুপুরের খাবারের আয়োজন চলছিলো। মা বললো "জামাল এসো আমাদের সাথে খাবে"। আমার পরম শ্রদ্ধেয় মা মরহুম মরিয়ম বেগম ছিদ্দিকা বলছিলেন, আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় শাহজাদা মরহুম জামাল আহমদ ভাইকে উত্তরে জামাল ভাই বলেছিলো , "চাচি তোমার বাবাকে যেভাবে ভাত দাও ,তেমনি আমাকে ভাত দাও। আমিও খাবো নানার মতোন করে এই ঘরে। মা খাবার আয়োজন করলো
মাটির মেঝের উপর শীতল পাটি বিছানা হলো, তারপর ঐ পাটির ঠিক মাঝখানে নানান কারুকার্য করা দস্তর খানাটি পরম যত্নে বিছানো হলো। পরম আন্তরিকতা ,সময় নিয়ে খুব মমতা দিয়ে এর প্রতিটি কোণা ঠিক করে সেট করলো পাটির ঠিক মাঝখানে। ঘন্টা খানেক আগে পরিস্কার করা রুপার তৈরি ছিলমছি আর বদনা আনা হলো। সোনালী রংয়ের আভায় ছিলমছি ও বদনা দুটোই ঝকঝকে তকতকে আলোর ঝিলিক ছড়াচ্ছে। এরপর আনা হলো সাধারণের চেয়ে একটু বড় কাচেঁর প্লেটটি। পাশগুলোও উচাঁ । সেই সময়ের খুব সম্ভবত বার্মা থেকে আনা দর্শনীয় সিরামিকের প্লেট। তাও নানান কারুকার্য করা ফুলের শিল্পে ভরা। এরপর ভাত আর সব তরকারি আনা হলো একে একে। আমার পরম শ্রদ্ধেয় নানার মরহুম আহমদুর রহমানের জন্য জন্য আমার মা মরহুম মরিয়ম বেগম ছিদ্দিকা এবং নানি পরম শ্রদ্ধেয় মরহুম জোহরা খাতুন দুপুর ও রাতের খাবার পরিবেশন করতো এইভাবে। ঘরে ডাইনিং টেবিল থাকলেও নানা আমাদের সবাইকে নিয়ে পাটিত দস্তরখানা বিছিয়ে খেতে বসতেন।নানান ধরনের তরতাজা সব্জি আর খালের তাজা পুই মাছের তরকারির আয়োজন থাকতো । জামাল ভাইও আমাদের ঘরে আসলে ,যেদিন ভাত খেতো এই ভাবে আয়োজন হতো। শুধু চুনতীতে নয়, উনি আমাদের জয়নগর বাসায় নিয়মিত আসতেন। আমাদের অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলতেন। সহজ সরল জীবন যাপন ছিলো জামাল ভাইয়ের সবার সাথে মিশতেন। আমাকে সীরতুন্নবী সঃ এর দাওয়াত এবং কাজ করার জন্য ডাকতেন। একদিন সভাপতি হিসেব ওনার স্বাক্ষর করা একটা চিঠি পেলাম ।জানালো এই চিঠির মাধ্যমে তোমাকে সীরতের একজন খাদেম হিসেবে লিখিত স্বীকৃতি আর নির্দেশ দেওয়া হলো। এখন থেকে তোমার অনেক দায়িত্ব। শাহ সাহেব কেবলার পরিবারের জীয়নকাঠি আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় বোন ও ভাবি মরহুম নুর জাহান লুলু ভাবিও এক অসধারন অনন্য মানুষ ছিলেন। জামাল ভাই তেমন বৈষয়িক ছিলেন না। ভাবি পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিজে নিজে অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সমাধান করতেন। ধৈর্য আর নিজের মেধা আর দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ভাবি পুরো পরিবার এবং শাহ পরিবারে আগত মেহমানদের খাওয়া ও সেবা যত্ন করতেন। ভাবির পরিশ্রম এবং আয়োজন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এটা লিখে ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। এটা যারা আমরা দেখেছি সেটা তারা উপলদ্ধি করেছি। এমনো দিন রাত গেছে আগত মেহমানদের খাবার দাবার আয়োজন এর জন্য উনি দিন রাত কাজ করেছেন, রান্না করেছেন। নিজে একটুও বিশ্রাম পায়নি, কিন্তু খাবার এবং সেবার কোন ত্রুটি হয়নি। মহান আল্লাহ ওনাদের সবাইকে জান্নাত বাসী করে রাখুক।
Make sure you enter the(*)required information