দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যান্ডের জগতে নন্দিত কণ্ঠশিল্পী নকীব খানকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছুই নেই। তবে এমন একজন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী মানুষ যিনি আমাদের সকলের ভালোবাসার পাত্র প্রিয় নকীব খানের বিশেষ কিছু অর্জনের কথা না বললে হয়তো নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি শুধুই একজন ব্যান্ড শিল্পীর পরিচয় বহন করবে।
১৯৬০ সালের ১৮ মার্চ নকীব খানের জন্ম চট্টগ্রাম জেলার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত লোহাগাড়া উপজেলার পীর, আউলিয়া, সুফি, সাধকের জন্মভূমি চিরহরিৎ চুনতি গ্রামে। নকীব খানের শৈশব কেটেছে গ্রামেই। পারিবারিকভাবে তার সঙ্গীতের হাতেখড়ি। মূলত উনার বড় ভাই এক সময়ের প্রতিভাধর গীতিকার ও সুরকার জিল্লু খানের হাত ধরেই নকীব খানের সঙ্গীতে পদার্পন। পরবর্তীতে বড় দুই ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ছোট ভাই পিলু খানও সঙ্গীতে যোগ দেন। পিলু খান মূলত একজন জনপ্রিয় ড্রামার হিসেবে সুপরিচিত। একই পরিবারের তিন ভাই একই মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করে নন্দিত হওয়ার দৃশ্য বাংলাদেশ খুব কমই দেখেছেন। বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের শুরুই করেছিলেন নকীব খানেরা। শুরুর দিকে চট্টগ্রাম থেকেই দেশের নামকরা ব্যান্ডের যাত্রা শুরু করে সেসব ব্যান্ড রাজধানী কাপিয়ে জাতীয় সঙ্গীতাঙ্গনে পৌঁছে গেছেন৷ সেখান থেকেই দেশের নামকরা ব্যান্ড শিল্পীরা নামডাক কামিয়েছেন। এসব শিল্পীরা দেশের যেখানেই থাকুক না কেন জনপ্রিয় গানের অ্যালবাম বের করতেন আর তরুণ তরুণী, যুবকদের মন জয় করতেন। বর্তমান সময়ের জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, কুমার বিশ্বজিৎ, পার্থ বড়ুয়াসহ বিখ্যাত সব শিল্পীরা একই কাতারে থেকেই ব্যান্ড সঙ্গীতকে আজকের জায়গায় নিয়ে গেছেন।
নকীব খানের সঙ্গীতাঙ্গনের পরিচয় দিতে গেলে তিনি একাধারে একজন সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার। এর সাথে তিনি একজন মিউজিক কম্পোজার, চলচিত্রের সঙ্গীত পরিচালক।কৈশোরেই ব্যান্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন নকীব খান। বালার্ক ব্যান্ডে গায়ক, পিয়ানিস্ট ও শিল্পী হিসেবে তার প্রথম আত্মপ্রকাশ। কিছুদিন পর যোগ দেন সোলসে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সুরেলা নামের ব্যান্ডকে সোলস হিসেবে পুনঃনামকরণ করা হয়। সোলসে প্রায় ১০ বছর ছিলেন নকীব খান। বাবা মারা যাওয়ার পর চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৮৫ সালে গড়ে তোলেন নিজের ব্যান্ড রেনেসাঁ।১৯৮৮ সালে আসে দলের প্রথম অ্যালবাম ‘রেনেসাঁ’ নামেই। ১৯৯৩ সালে ‘তৃতীয় বিশ্ব’, ১৯৯৮ সালে ‘৭১-এর রেনেসাঁ’ এবং ২০০৪ সালে ‘একুশ শতকের রেনেসাঁ’ নামে অ্যালবাম প্রকাশ করে তারা। আর নকীব খান, নিজের ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, আইয়ুব বাচ্চুর ‘এখন অনেক রাত’, নিজের ‘ভালো লাগে জ্যোৎস্না রাতে’, কুমার বিশ্বজিতের ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানের সুরকার।নকীব খান মিউজিক সোসাইটি বাংলাদেশ এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কৌশিক সংকর দাশের পরিচালিত সিনেমা "পাঞ্চ" এ নকীব খান প্রথম কোন চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।এই তো গেলো সঙ্গীতাঙ্গনের নকীব খানের ক্ষুদ্র পরিচয়। নকীব খান সঙ্গীতের চিরচেনা মুখ হলেও তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে চাকুরী করেছেন। পেশাগত জীবনে নকীব খান নেসলে বাংলাদেশ-এর কর্পোরেট বিষয়ক পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে প্রায় আট বছর চাকরি জীবনের শুরুতে ফিলিপস বাংলাদেশ লিমিটেড এবং বিওসি বাংলাদেশ লিমিটেড-এ চাকরি করেন। সম্প্রতি গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি) আগামী ৩ বছরের জন্য চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ(সিএসই) এর নতুন পর্ষদ গঠন করেন। সেখানে ৭জন স্বতন্ত্র পরিচালকের নিয়োগ প্রদান করেছেন। যার মধ্যে নকীব খান একজন।
একই দিনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত জাতীয় লজিস্টিক উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটি গঠন সংক্রান্ত একটি গেজেটে তাকে সদস্য মনোনীত করা হয়। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে তিনি বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত গেজেটে বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির সভাপতিকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। একজন সঙ্গীত শিল্পী থেকে একজন দক্ষ ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালনের এমন গুরুদায়িত্ব খুব কম মানুষের জীবনে এসেছে। সে হিসেবে শিল্পী নকীব খান আমাদের সামনে একটি দৃষ্টান্ত।
Make sure you enter the(*)required information