।। প্রকৃতি ও গ্ৰাম ।।
সুন্দর একটি গ্রাম আর ঐ গ্রামের মেঠো পথটি সচরাচরভাবে সিক্ত হয়ে থাকে প্রতিদিনের শুরু হওয়া শিশু সূর্য অথবা বিকালের ক্লান্ত বয়স্ক সূর্যের কোমল আলোতে। এই সময়ের একটি মেঠো পথ.. দুপাশে নিখাদ প্রকৃতির যত্নে-অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছগাছালি...তা হতে ঝরে পড়া বা ঝেড়ে ফেলা, প্রয়োজন ফুরানো, ম্রিয়মাণ, মৃতবৎ ক্ষয়িষ্ণু পাতাগুলোর সাথে এটেল-দোআঁশ মাটির আধো ভেজায় স্পর্শিত সম্পর্কে সৃষ্ট সোদা গন্ধ যে গ্রহণ করেনি বা অনুভব করেনি সে এক অভাগা।
নিজের পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত একটি গ্রাম অন্ততপক্ষে থাকা প্রয়োজন আর নয়তো একটি আগন্তুক গ্রামকে আপন করে নেয়া বর্তমান সময়ের একটি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আধুনিক যান্ত্রিক যুগে একটি প্রাকৃতিক গ্রাম যেন ব্যস্তময় জীবনের বিরতিতে পাওয়া এক পলক শান্তির স্হান। কলহ-বিরোধ-হিংসায় উন্মত্ত মহাবিশ্বের ছোট বালুকনাময় সবুজ এই পৃথিবীর অস্থির জীবগুলো এক-দু'দণ্ড শান্তি চায়, বিশ্রাম চায় কিন্তু পায়না। অনেক সময় এমনকি বিনিময়ের হার কোটি টাকা হলেও....কেন যেন মনে হয়, ৪০০/৫০০ কোটি বছরের মন গুলোও পঁচে গেছে :( সুস্থতা এখন এক ধরনের অসুস্থতা মাত্র। এমন পরিস্থিতিতে একটি সুন্দর গ্রাম, সুন্দর প্রকৃতি হয়তোবা জরাগ্রস্ত, ব্যস্ত যান্ত্রিক এই মানবসমাজের জন্য প্রশান্তিময় হলেও হতে পারে।
মন বা প্রকৃতি যে কোনো একটি সুখী হলেই হলো ; কারণ একটি আরেকটির আপেক্ষিক, একটি আরেকটিকে আবেশিত করে। কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও কোলরিজ তাইতো বলে গেলেন.... কেউ একজন বলেছেন মন ভালো তো প্রকৃতিও ভালো অর্থাৎ উপভোগ্য। আরেকজন বলেছেন, না...প্রকৃতি সুন্দর, সতেজ থাকলে, মন উৎফুল্ল থাকে, সুখী থাকে।
তবে আমি নিশ্চিত, প্রকৃতি তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশেই প্রকৃষ্ট। তাই এক পক্ষ (প্রকৃতি) ভালো তো, আরেক পক্ষ (মন) খারাপ হয় কি করে! সবুজ এই গ্রহের কতো অস্থির, ব্যস্তময় জীবের 'মন'গুলো কতদিন যে এ ধরনের সাবলীল অকৃত্রিম প্রকৃতিতে অবগাহন করেনি তার কি কোন হিসাব আছে ! যদি তাই হতো তবে রুচির অভাব হতো না, ধর্ম/আদর্শের চুল-চেরা অনুশাসন নিয়ে অহেতুক যুক্তিহীন বিতর্ক হতো না, মানুষ অস্হির আচরন করতো না, পারস্পরিক হিংসায় ডুবতো না, মিথ্যাচার করতো না, খাদ্যপণ্যে ভেজাল দিতো না, দূর্নিতী করতো না....!
প্রতি স্কয়ার ফিট হিসাবের এই শহুরে জীবন আমাদেরকে অর্থ উপার্জন আর উচ্চাভিলাসের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ করিয়েছে, যা প্রতিনিয়ত মানুষের মনুষত্য হরণ করাচ্ছে। যদি এই শহুরে তথাকথিত অমানুষগুলো বছরের নিয়মিত বিরতিতে নিখাদ অকৃত্রিম প্রকৃতির মাঝে গ্ৰামীন পরিবেশের ছোঁয়া পেতো, সভ্যতার মানবিক উন্নয়ন ঘটতো নিঃসন্দেহে। তাই বলি কি, সবার নিজ নিজ 'গ্ৰাম' থাকা প্রয়োজন। আর পৈত্রিক না থাকলেও একটি বানিয়ে নিন, যে ভাবেই হোক না কেনো।
একেবারে অপারগ হলে, মনটাকে মাঝে মাঝে ভার্চুয়াল গ্ৰামে রূপান্তর করেন। শান্তি পাবেন নিশ্চিত। আপনি-আমি শান্তি পেলে পরিবার, গোষ্ঠী, সমাজ, জনপদ তথা জাতি, দুনিয়া শান্তি পাবে।
ওয়াহিদ আজাদ (পূর্বের একটি লেখার পরিমার্জিত সংষ্করণ) ; ২৮.০৪.২৩
Make sure you enter the(*)required information