১৯০৪ সালে চুনতী গ্রামে হযরত মাওলানা শাহ হাফেজ আহমদ (রহ:) (শাহ সাহেব কেবলা চুনতী নামে পরিচিত) জন্মগ্রহণ করেছেন ।তার পিতার নাম মাওলানা সৈয়দ আহমদ (রহ:) এবং মাতার নাম হাজেরা খাতুন। তাঁর পূর্ব পূরুষ হযরত শাহ আলম খন্দকার আরব দেশ হতে স্থল পথে দিল্লীতে আসেন। হযরত মাওলানা শাহ হাফেজ আহমদ (রহ:) বাঁশখালীর ছনুয়া মাদ্রাসা, চন্দনপুরা দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসা ও কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন। কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল ডিগ্রী অর্জন করেন। কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসা থেকে অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরেন। তারপর দাদার জমিদারী দেখার জন্য আকিয়াবে (বর্তমান মায়ানমার) চলে যান। সেখানে তিনি মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিন পর তিনি ইমামতি ছেড়ে দিয়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।তার অলৌকিক কিছু কারামাত আমাদেরকে বার বার নাড়া দেয়। তিনি দ্বীনের জন্য ইসলাম প্রসারের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি ২০/২২ বছর পাহাড়-জঙ্গল, শহর-বন্দর, ঝড়-বৃষ্টিতে আল্লাহর জিকির ও হযরত মুহাম্মদ (স:) এর প্রশংসা করে ঘুরে বেড়াতেন। মাঝে মাঝে তিনি চুনতীতে আসতেন। তাঁর মুখে সব সময় একটি বাক্য সার্বক্ষণিক পড়তে থাকতো তা হল“হাম মাজারে মুহাম্মদ (স.) পে মর জায়েঙ্গে, জিন্দেগি মে ইয়েহি কাম কর জায়েঙ্গে”।শাহ ছাহেব কেবলার অন্যতম সহায়ক শক্তি ছিলেন চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য বিশ্ববরেণ্যে আলেমেদ্বীন ও গবেষক প্রফেসর ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি মহোদয়ের পিতা নাজেমে আলা হযরতুল আল্লামা ফজলুল্লাহ (রহ.)।শাহ ছাহেব কেবলার কেরামতের কথা এখনো লোক মুখে শুনা যায়। আরকান সড়কের গাড়ি চালকদের নিকট প্রথম তাঁর কেরামত প্রকাশ পায়। ওই সময়ে আরকান সড়ক কাঁচা থাকায় চালকদের গাড়ি চালানো কষ্ট হত। চালকদের সাহায্যার্থে শাহ সাহেব কেবলা উপস্থিত হতেন। শাহ সাহেব কেব মুসলমানদের ঈমানী চেতনাকে জাগরণ ও রাসূলের (সা.) জীবনের বাস্তব শিক্ষা প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করার মহান উদ্দেশে ১৯৭২ সালে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির মহান আধ্যাত্মিক সাধক আশেকে রাসূল (সা.) খ্যাত হযরত আলহাজ্ব শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ প্রকাশ (শাহ সাহেব কেবলা) (রা.) বিশ্বের একমাত্র ১৯ দিনব্যাপী সীরাতুন্নবী (সা.) প্রতিষ্ঠা করে সর্বশ্রেণীর মুসলমানদের জন্য প্রেরণার ঝর্ণাধারা এবং নজিরবিহীন দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছেন।সীরতুন্নবী (স.) মাহফিলে আগত লাখ লাখ বক্তদের জন্য গরু, খাসি জবেহ করে মানুষকে খাওয়ানো হয়। এতে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা থাকেনা। সব নীরবে এক অলৌকিক ভাবে চলছে থাকে যা আমরা নিজ চোঁখে দেখতে পাই।আমার বয়স যখন তিন বছর তখন থেকে সীরত মাহফিল দেখে আসছি। সীরত মাহফিলের প্রতি আমার মন, হৃদয় সবসময় কাঁদে।সীরত মাহফিলের কথা মনে পড়লে শাহ ছাহেব কেবলার কথা মনে পড়ে যায়। অন্তরে, হৃদয়ে সবসময় ওনাকে ধারণ করে থাকি। সীরত মাহফিলের প্রতি আমার অনেক আন্তরিকতা ভালবাসা রয়েছে। আমি যখন চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর ছাত্র ছিলাম, অলিকুল সম্রাট শাহ ছাহেব কেবলা রঃ আমাদের বিদ্যালয়ে সবসময় যেতেন তিনি সেখানে আমাদের জন্য দু হাত তুলে মোনাজাত করে মহান আল্লাহর দরবারে দোআ চাইতেন। শাহ ছাহেব কেবলাকে আমি অনেক কাছে থেকে দেখেছি, ওনার ভালবাসা,স্নেহ, পরশ পেয়েছি।যা কোনদিন ভূলার নয়। আল্লাহর সন্তুষ্ঠি অর্জনের জন্য এরকম সীরত আমাদের জন্য শাহ ছাহেব কেবলা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।ওনার রেখে যাওয়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শত শত আলেম ও আলোকিত মানুষ হয়ে এদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছেন। শাহ সাহেব কেবলা ১৯৭২ সালের ১১ রবিউল আউয়াল ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক চুনতী সিরাতুন্নবী (স:) মাহফিল প্রবর্তন করেন। এই মাহফিল ১৯৭৩ সালে ২দিন, ১৯৭৪ সালে ৩ দিন, ১৯৭৫ সালে ৫ দিন, ১৯৭৬ সালে ১০ দিন, ১৯৭৭ সালে ১২ দিন, ১৯৭৮ সালে ১২ দিন, ১৯৭৯ সালে ১৫ দিন, ১৯৮০ সালে ১৯ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে ১৯ দিন ব্যাপী সীরাতুন্নবী (স:) মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দেশ বরেণ্য আলেমরা-বক্তারা ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরাতুন্নবী (স:) গুরুত্বপূর্ণ তকরির পেশ করে থাকেন। ১৯৮৩ সালের ২৯ নভেম্বর মাহফিলের ১৯ দিন আগে শাহ সাহেব কেবলা ইন্তেকাল করেন। মসজিদে বায়তুল্লাহর দক্ষিণ পার্শ্বে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত থেকে যেন প্রত্যক্ষ করছেন উনার রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠিত সকল প্রতিষ্ঠানসমূহ।মহান রাব্বুল আলামীন উনাকে জান্নাতের আলা মকাম নছীব করুন, চুনতি হাফেজ আহমদ (রাহ.আ.) প্রকাশ শাহ সাহেব কেবলা কর্তৃক প্রবর্তিত ১৯ দিনব্যাপী সীরতুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাহফিলের সফলতা কামনা করি এবং মহান আল্লাহ উনার এই প্রতিষ্ঠানসমূহকে কেয়ামত পর্যন্ত জারি রাখুন। আমিন। লেখকডাঃ মাহমুদুর রহমানসহকারী অধ্যাপকচট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ট্রমা,অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন।
Make sure you enter the(*)required information