দশ পয়সার বাদামবুট ও আমার ফুটো পকেট
লেখক: ছাইফুল হুদা সিদ্দিকী
(আমর ছেলের মন্তব্য ঃবাবা তুমি ছোটবেলায় ভীষন বোকা ছিলে)
দিন তারিখ মনে নাই। খুব সম্ভবতঃ তখন আমি চুনতি হাকিমিয়া প্রাইমারী বিদ্যালয়ের ২য় কিংবা ৩য় শ্রেনীর ছাত্র।আজ বাজার দিন ,বিদ্যালয় থেকে এসে মাকে বললাম মা আমাকে দশটি পয়সা দাও আমি মুন্সেফ বাজারে যাব, মা হেসে জানতে চাইলো শুধু দশ পয়সা কেন? আরও বেশী টাকা পয়সা নিয়ে যা বাজারে যাবি কিছু মাছ তরকারী নিয়ে আসিস।না মা আমি এ গুলো কিনতে পারবোনা ঐগুলোর জন্য তুমি মেজভাইকে বলো,আমি বাজারে যাবো আর শুধু দশপয়সার বাদামবুট কিনবো।মা দশপয়সা দিলো।আমি দশ পয়সাটা প্যাণ্টের বাম পকেটে ফেলে দিয়ে এক দৌড় দিলাম বাজারে। চুনতি মুন্সেফ বাজার তখন সপ্তাহে দু দিন বাজার বসতো। আমাদের বাড়ী থেকে মুন্সেফ বাজার হেটে গেলে তিন/চার মিনিট লাগে ।বাদামবুট খাবো তাই আমি একদৌড়ে মুন্সেফ বাজারে মানে দু মিনিটে পৌছে গেলাম।এদিক ওদিক কিছুক্ষণ ঘুরপাক খেলাম। ভয়ে ভয়ে দোকান গুলোর পাশদিয়ে হাটলাম আর দেখলাম মুরব্বীরা সবাই যার যার মতোন বাজার করছে।কেউ মাছ কিনছে, কেউ কিনছে শুটকী কিংবা কেউ কেউ শাক তরকারী ও গরুর মাংস ও মুরগী কিনছে।তখনকার সময় পলিথিন, নেট কিংবা ছটের থলে ছিলোনা ঐ সময়ে বেতের তৈরী একধরনের জুড়ি ছিল যা খুব শক্ত এবং এর একটা হাতল থাকতো।স্থানীয় ভাষায় এটাকে ঢুলা বলা হতো, ঐ বেতের তৈরী জুড়ি পূর্ন করে সবাই বাজার করতো। আর আমার আব্বা এবং চাচা জ্যাঠাদের ঐ বাজারের জুড়ি বহন করার জন্য সবার আলাদা আলাদা লোক থাকতো। আমার আব্বার সাথে আবদুল আলীম মামাকে দেখলাম বাজার করছে।আমি ভয় পেলাম যদি আব্বু আমাকে দেখে ফেলে তা হলে এখন বকা খাব। ঐদিক থেকে সরে এসে দক্ষিণ দিকে আসলাম। আর বাদাম বুটওয়ালাকে বললাম আমাকে দশ পয়সার বাদামবুট দেন। ও একটু দেরী করছিল তাগাদা দিলাম তাড়াতাড়ি দেন। বাদাম বুটওয়ালা ছোট্র কাগজ মুড়ে আমার ডান হাতে দিল আর আমি বাম পকেটে হাত দিলাম , বাদাম বুটের মুল্য মানে সেই দশ পয়সাটি দেওয়ার জন্য, খেয়াল করলাম আমার বাম পকেটে পয়সা নেই।হতচকিত হয়ে ডান পকেট দেখলাম এখানেও দশ পয়সাটি নেই।বাদামবুটের প্যাকেটটি ওর ডালায় রেখে আবার বাম পকেটে হাত দিলাম ভালো করে খুজেঁ দেখলাম না কোন পকেটে পয়সাটি নেয়।একটু পরে বুঝতে পারলাম আমার প্যান্টের বা্ম পকেটে একটা ফুটো।মানে আম্মার দেওয়া সেই দশ পয়সাটি ঐ ফুটো দিয়ে রাস্তায় কিংবা বাজারে কোথাও পড়ে গিয়েছে। বাদাম বুটওয়ালা বলল ও পুতুইন্য(ছেলে) পয়সা দ না। একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে ওকে আর কিছু না বলে দিলাম ভৌ দৌড়। এক দৌড়ে বাড়ীতে পৌছে গেলাম।গতকাল আমার ছেলে সাফওয়ানুল হুদা ছিদ্দিকী মাহির আমাকে বললো বাবা তোমার ছোটবেলার গল্প বলো। তোমরা কি খেতে চিপস না কোকোমো না কিণ্ডারজল? ওকে ছোটবেলার গল্প বলতে গিয়ে আমার শৈশবের এই ছোট্র ঘটনাটা স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠলো।আর মনে পড়লো পকেটটা কেন ফুটো ছিলো।সেটা হয়তো পরের পর্বে লিখবো। আজ বিশেষ করে লিখছি, আমার জীবনের বাস্তব এই ঘটনা বলার পর পরই মাহির জানতে চাইলো,বাবা তুমি বাদামবুট নিয়ে দৌড় দিয়েছিলে না বাদামবুট ছাড়া ?আমি বললাম বাদামবুট আমি ওর ডালায় রেখে দৌড় দিয়েছিলাম। আমার ছেলে কি যেন একটু ভাবলো!আর আমাকে বলল ও হলে বাদামবুট নিয়েই দৌড় দিতো।ওকে বাদামবুটওয়ালা ধরতে পারতোনা আর বাড়ীতে গিয়ে আবার মায়ের কাছ থেকে আর একটি দশপয়সা নিয়ে বাদামবুট ওয়ালাকে দিতো।এতে বাদামবুট ওয়ালাও ওর পয়সা পেতো আর ওর বাদামবুট ও খাওয়া হতো।আর শেষ মন্তব্যটি আমাকে আবাক করে সে বলো বাবা তুমি ছোটবেলায় ভীষন বোকা ছিলে।
Make sure you enter the(*)required information