লবণের স্বাধ
আম্মা বললো তুই কি আজকে কলেজে যাবি ?আমি বললাম অবশ্যই আজকে আমাকে কলেজে যেতে হবে আজ আমার কলেজ জীবনের শুরু।আমি জানতে চাইলাম কেন?কোন সমস্যা?আম্মু বলল তেমন কিছু না ।আমরা আজকে তোর নানার বাড়ী যাব।আমি জানতে চাইলাম কখন যাবা? সকালে না বিকেলে? আম্মু বলল সকালেই যেতে হবে কারণ তোর মেঝো খালারা এখন ওখানে ওরা বিকেলে ওদের বাড়ীতে ফিরে যাবে তাই। তোর নানী আমাদের জরুরী আজকে যাওয়ার জন্য খবর পাঠিয়েছেন।ঠিক আছে তোমরা সকালে গেলে আমি বিকেলে যাব।কথা হলো কলেজ থেকেই আমি ফৌজদারহাট নানার বাড়ী যাব এবং দুপুরের খাওয়াটা নানার বাড়ীতেই খাব।আম্মা ভাই ও বোনরা সবাই মিলে সকালে নানার বাড়ীর উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়েছে।আমার কলেজ হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ বাসার কাছেই।আমি যথা সময়ে কলেজে পৌছে গেলাম।দুই দিকে দুটো ছাত্র রাজনৈতিক দলের বড় ভাইরা দাড়িয়ে আমাদেরকে ফুল ও নানা রংয়ের লিফলেটউপহার দিলো।দুইদিকে নবীন বরণের অনুষ্ঠান চলছে , তুমুল বক্তব্য ও মিছিল হচ্ছে।কলেজ জীবনে আমাদের ১ম দিন।সকাল দশটায় বাংলা ক্লাস শুরু হল।শ্রদ্ধেয় দুরাখসা ম্যাডাম ক্লাস নিচ্ছেন।উনি শুরু করলেন আজ আমাদের ১ম ক্লাস।তোমরা এখানে এসেছো কিছু শেখার জন্য।নিজেকে ভবিষ্যৎ এর জন্য তৈরী করতে।আমাদের শিক্ষাঙ্গন পবিত্র রাখতে হবে।এখান থেকেই একটা ভাল ও উন্নত জাতি হিসেবে আমাদের ভিত-ভবিষ্যৎ তৈরী করে নিতে হবে।নারী ও পুরুষ একসাথে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।একে অপরকে সহযোগীতা ও সন্মান করতে হবে।উনি হঠাৎ হাসনাকে ডাকলেনএবং বললেন যখন কোন চিঠি বা যে কোন ব্যাপারে কোন নারীকে সম্বোধন করবে কিভাবে শুরু করবে লিখ?হাসনা লিখলো।জনাবা আফরোজা,ম্যাডাম বললো দাড়াও আর লিখতে হবেনা।তুমি যাও।এবার একটা ছেলে এসো।ঠিক আছে তুমি এসোমঈন এসে লিখলোজনাবা আফরোজা,ঠিক আছে তুমি যাও।ম্যাডাম এবার বলল আর একজন।ফরহাদ এগিয়ে গেলো সেও লিখলো একই।ম্যাডাম আবার জানতে চাইলো যদি এখানে নারী না হয়ে পুরুষ হতো তোমরা কিভাবে লিখবা?ফরহাদ লিখলো,জনাব রহমান সাহেব।ঐ দিনের ক্লাসে একটা বিষয় ম্যাডাম জানালো নারী পুরুষ যাই হোক, সবসময় লিখবে “জনাব”।কখনও নারীদের ক্ষেত্রে “জনাবা” লিখবেনা।বাংলা ক্লাস শেষ এরপর ইংরেজী ক্লাস।সবাই অপেক্ষায়।হঠাৎ শুনলাম বাইরে খুব চিংকার চেচামেচি হচ্ছে।এরপর জানালায় উকি দিয়ে দেখলাম একদল ছাত্র হাতে লাঠি ও হকিষ্টিক নিয়ে তিন চারজন ছাত্রকে দৌড়াচ্ছে।আমরা হতবাক কি করবো ?হঠাৎ মঈন ক্লাস থেকে বের হল ঐ ছেলেগুলোর সামনে দিয়ে বেরিয়ে যাবে এমন সময় একটা ছেলে ওর মাথায় আঘাত করল।ওর মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোলো। আমরা ভীষন ভয় পেলাম এবং তিন চারজন বন্ধু মিলে ওকে চট্রগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে গেলাম। জরুরী বিভাগে চিকিৎসার পর ওর বাসায় ওকে পৌছে দিলাম।আজকে আর কোন ক্লাস হবেনা।বন্ধুরা সবাই যার যার বাসায় চলে গেলো।আমি আমার বাসায় আসলাম।আমার মনটা ভীষন খারাপ ।সদ্য মাধ্যমিক পেরিয়ে অনেক নতুন কিছু দেখার এবং উচ্চ শিক্ষা লাভের আশা নিয়ে কলেজে এসেছিলাম কিন্ত এ কি দেখলাম।ছাত্র রাজনীতির এ কোন কালো দিক।ভাবলাম এরাইতো আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ।জানিনা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ কি হবে?হঠাৎ আমার ভীষন ক্ষিধা অনুভব হল।মনে পড়ল অনেকক্ষন পেঠে কিছু পড়ে নাই।ক্ষুধার তীব্রতায় সব ভুলে গেলাম।ঠিক করলাম আগে কিছু একটা খেতে হবে।দেখি ঘরে কি আছে?পাকঘরে গেলাম কিন্ত কিছুইতো রান্না করা নাই।ফ্রীজ খুললাম হতাশ হলাম একি ব্যাপার ফ্রীজতো খালি।একপাশে শুধু কয়েকটা ডিম, তিন চারটা আলু আর একটা লেবু আছে।কি করা যায়? হোটেলে যাব বা না খেয়ে নানার বাড়ী চলে যাব?এমন সময় হঠাৎ চিন্তা করলাম যদি বাসায় চাল থাকে তবে ভাত রান্না করা যায়।ভাত খেয়ে তারপর নানার বাড়ী যাব।যেই ভাবা সেই কাজ।চাল ধুয়ে গ্যাসের চুলায় দিলাম ।ভাত রান্না হল।রান্না বান্না আমি তেমন জানিনা।তবে ভাতের সাথে কিছু একটা তরকারী তো চাই।ঠিক করলাম আলু ভর্তা আর ডিম সিদ্ধ আর সাথে লেবুর সরবত তবে চিনিছাড়া।এরি মধ্যো আর একচুলায় পানি দিয়ে আলু আর ডিম সিদ্ধ করলাম।দুটো কাঁচামরিচ ও একটা বড় পিয়াঁজ খুজে পেলাম।পিয়াঁজ কাটঁতে গিয়ে চোখে পানি আসলো।চুলার আচেঁ গায়ে ঘাম দিল।অনুভব করলাম রান্না করা খুব সহজ কাজ নয়।আলু ও ডিম সিদ্ধ হল।আলুর চামড়া পরিস্কার করে কচলিয়ে সরিশার তেল, কাচামরিচঁ ও পিয়াজ দিয়ে আলুর ভর্তা বানালাম।ভীষন ক্ষিধে পেয়েছে।তাড়াতাড়ি খেতে হবে।আলুর ভর্তাটা একটু মুখে নিলাম।জঘন্য হয়েছে কেমন যোনো বি-স্বাধ লাগলোস্বাধ বাড়ানোর জন্য ফ্রাইপেনে তেল দিয়ে আলু ভর্তাগুলোকে ভেজে নিলাম কিন্তু সেই একই অবস্হা। কি আর করা ক্ষিধায় আর পারছিলাম না,সেই তেলে ভাজা স্বাধহীন আলু ভর্তা ও ডিম দিয়ে ভাত গুলো কোন রকমে খেয়ে ক্ষুধা নিবারন করলাম।আপনারা হয়তো এতক্ষনে বুঝতে পেরেছেন।আমি আলু ভর্তায় লবণ দিই নাই।সেদিনের তিনটি বিষয় আমি এখনো ভুলি নাই।* নারীকে সন্মান দেওয়া।* ছাত্র রাজনীতির ভাল ও খারাপ দিক।* আর বিশেষ হলতরকারীর লবণের স্বাধ।
Make sure you enter the(*)required information