আসছে বছরের জন্য জীবন ভাবনা:সামাজিক জীব বলে প্রচন্ড আত্মতৃপ্তিতে ভোগা একমাত্র উচ্চ শিক্ষিত জীব হল মানুষ। অতি শিক্ষা এদের মধ্যে তৈরি করেছে আত্মঅহমিকা যা দিয়ে সে প্রতিনিয়ত তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার প্রয়াসে থাকে। কি এই শ্রেষ্ঠত্বের খেলা? কেনইবা এই ছোট্ট এক টুকরো জীবনকে প্রতিনিয়ত জটিলতর করে তুলবার অহেতুক প্রতিযোগিতা?সূর্যের উদয় কত উদার, পাখিগুলো নিজকাজে চঞ্চল, প্রাণীকুল নিজ নিজ আহার্য আর নিরাপদ বাসস্থানটুকু নিয়েই তৃপ্ত! বাকি সময়টুকু ওরা পৃথিবীর রঙ রূপ আস্বাদন করে! এ জন্য ওদের কোনো হানাহানি অথবা অন্যকে হেয় করার প্রয়োজন পড়ে না!মানুষ, হ্যাঁ মানুষই হল জগতের সবচেয়ে জটিল প্রাণী যার মস্তিষ্ক তাড়িত চিন্তাগুলো তাকে নিজের প্রতিই ঈর্ষান্বিত করে তোলে, এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় তাকে নিমগ্ন করে রাখে। কি আছে ছোট্ট একটা জীবনে? পর মুহূর্তেই বেঁচে থাকাটা যার কাছে অনিশ্চিত, সে করতে থাকে বছরান্তের হিসেব নিকেশ! কি হবে, কি নেই, কি প্রক্রিয়ায় নিজেকে জাহির করা যায় এই ভাবনাগুলোর অন্তরালে হারিয়ে ফেলে একটা নির্লোভ, নির্মোহ সময়ের ছবি!নিজেদের সুবিধাগুলো আদায় করার জন্য যে সমাজ ভাবনার উদয় হয়েছিলো, দিনে দিনে তাকে উন্নত করার ভাবনায় অস্থির এই জটিল মানবজাতি দিনে দিনে তার অবক্ষয়েরই জাল বুনেছে অজান্তে! যতদিনে সে উপলব্ধি করতে শেখে যে এক মুহুর্ত সময় আমি নাহয় আমাকে দিলাম, তাতে কি ক্ষতি, ততদিনে তার চারপাশটা এতোটাই জটিল হয়ে ওঠে যে সে চাইলেই তার ঘেরাটোপ অতিক্রম করতে পারে না! লোকে কি বলবে ভেবে এই বেকুব মানবজাতি তার ইচ্ছেগুলোকে মুহুর্তে মুহুর্তে মেরে ফেলতে থাকে অথচ সে বুঝতে চায় না যে এই কী ভাববে ওয়ালা আশেপাশের প্রাণীগুলো তার দুঃসময়ে তাকে চিনবেই কিনা সন্দেহ, যদিওবা চিনতে পারে, সাময়িক সমবেদনা, খুব বেশি হলে দু'চারদিন সাথে থাকার আশ্বাস দেওয়া, এর বেশি বৈ তো নয়!সারাক্ষণ এক অদৃশ্য শৃঙ্খল.....নিজের ভালো লাগাটুকু প্রকাশ করা যাবেনা!হঠাৎ, করে নিজেকে নতুন করে খোঁজা যাবেনা!হঠাৎ, গান গাইতে ইচ্ছা করা যাবেনা!হঠাৎ, কারো হৃদয়কে হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যাবেনা!হঠাৎ, মনটা কারো ঠোঁটের উষ্ণতা চাইতে পারবেনা!হঠাৎ, কারো হাত আরেকটা হাতকে অনুভব করতে পারবেনা!হঠাৎ, পৃথিবিটাকে ভীষণ সবুজ অথবা আকাশটাকে খুব গভীর নীল মনে হওয়া যাবেনা!হঠাৎ জ্যোৎস্না, অথবা জোনাকী, না না না এ ভাবা যাবে না!হঠাৎ, গভীর রাতে কৃষ্ণচূড়ার ডালে পূর্ণিমা খেলা হবেনা!যতই ইচ্ছে করুক, নিজের ভালো লাগাটুকু প্রকাশ করা যাবেনা!হঠাৎ, কাউকে "ভালোবাসি" বলা যাবে না!কী অদ্ভুত! কেন যাবেনা? কারণ, জন্মের পর মুহুর্ত থেকেই মানুষ নিজের দাসখত লিখে দেয় সমাজের কাছে, যে সমাজের এতটুকু মুরোদ নেই যে নষ্ট করে দেয়া একটা মুহুর্তও সে ফিরিয়ে দিতে পারে!জীবন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে থেমে যাবে, শেষ বাঁশি বাঁজবার সময়টা একেবারেই অজানা তার কাছে! দায়িত্বশীল হতে জানে বলেই সে শ্রেষ্ঠ, কিন্তু এই দায়িত্বশীল হতে গিয়ে একটা কাঁধ কতটা নুয়ে পড়ে, কতটা ভেঙে পড়ে ভেতরে ভেতরে, কতটা আত্মগ্লানি তাকে সামনের দিকে চলার প্রতি বিতৃষ্ণ করে তোলে কেউ কি সে খোঁজ পায়? জন্মের অব্যবহিত পরেই শুরু হয়ে যায় দায়িত্ব নেবার জন্য তার কাঁধকে মজবুত করার অনুশীলন। কিন্তু কেন? মেয়েটা একটু বেড়ে উঠতেই তাকে প্রস্তুত করা হয় সংসার নামক একটা জুজু'র জন্য আজীবন দায়বদ্ধ থাকার জন্য। ছেলেটা তার বালক বেলা থেকেই জানতে শুরু করে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে অযাচিত সাংসারিক ভার! মোদ্দা কথা, এটাই হয়ে যায় জীবনের একমাত্র লক্ষ্য যে তাকে "বিয়ে" করতে হবে! ভালো লাগুক আর না'ই লাগুক, নিজে মরে গিয়ে হলেও এই বিয়ের বোঝাটাকে কত সফলভাবে সে বয়ে বেড়াতে পারলো এটাই তার যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি!বিয়ে করতেই হবে?সংসার করতেই হবে?ঢালাওভাবে এসব সিদ্ধান্ত দেবার অথবা নেবার সময় এখন বদলে যাচ্ছে। মানুষ জন্মগতভাবেই দায়িত্বশীল। কিন্তু, নিজের ভালোলাগাটুকু প্রকাশ করলে, কাউকে ভালো লেগেছে বললে, কারো পাশে বসে দু'চুমুক চা খেতে খেতে আপন মনে গলায় সুর এলে, কাউকে ভালোবাসি বললে, অথবা, একান্তই নিজের জন্য প্রকৃতির কাছে কিছু ভালো লাগা চেয়ে নিলে, পেছনের সবকিছু ব্যর্থ হয়ে যায়না, এ ভাবনাটুকু মানব মনে জাগুক, মানুষ একটু মুক্ত হাওয়া নিক বুক ভরে, মানুষ গাইতে শিখুক, মানুষ তৃপ্তি নিয়ে মরতে শিখুক, সেদিন এখন আর খুব দূরে নয়!নিজেকে ভালোবাসার চেয়ে সুন্দর ভালোবাসা পৃথিবীর আর কোথাও নেই, কারণ একমাত্র নিজেকে ভালোবাসতে পারলেই মানুষ জীবনের মূল্য বোঝে এবং অন্যের জীবনকে মূল্য দিতে শিখে!মানুষ জেগে উঠুক অচীরেই!২২.১২.২০২০
Make sure you enter the(*)required information