(আমার কিশোর বয়সের একটি সত্যি ঘটনা থেকে ও মায়ের আদেশ অবলম্বনেউৎসর্গ আমার মা শ্রদ্ধেয় মরিয়ম বেগম ছিদ্দিকাকে)রোদেলা দুপুর।সময় ৪টার ও কিছু পরে।সূর্য দক্ষিনে হেলে আলো ছড়াচ্ছিল। এ অপরুপ নবসাজ গ্রাম চুনতির রুপে।আমাদের গ্রামের বাড়ী বাংলাদেশের বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী গ্রাম চুনতিতে। নান্দনিক চুনতি গ্রামের অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সবার মনে দোলা দেয়।ছোট ছোট পাহাড় আর টিলার পাদদেশে দক্ষিণ চট্রগ্রামের শেষ সীমানায় এতো সুন্দর জায়গা যেন মন ছুঁইয়ে যায়।সোনালী সবুজেমাখা পুরোটা মায়াময় ধানের ক্ষেত ও বড় বড় খেলার মাঠ। যতদূর চোখ যায় পুরোটাই সবুজ।মন জুড়ানো সোনালী সবুজের সমারোহ।মাথার উপর সীমাহীন নীল আকাশ পাশে সবুজ শ্যামল সুন্দর ও মনোরম প্রাকৃতিক আবহে ভরা চুনতি গ্রাম।চুনতি গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও রুপ, লাবণ্যের কথা যতই লিখি না কেন বর্ণনায় পুরো তুলে ধরা যাবেনা।এ গ্রামে আছে শতবৎসরের মাগর্জন গাছে ভরা সবুজে শ্যামলে ভরা বনভূমি আর মা হাতির প্রজননস্থল খ্যাত চুনতি অভয়ারণ্যে। এই অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও রুপ, লাবণ্যে চিরকাল ধরে মুগ্ধ কবিচিত্তে কাব্যস্রোত বইয়ে দিয়েছে।চুনতির এই অপরুপ অতুলনীয় সৌন্দর্য্য বিভোর শৈশব পেরিয়ে কিশোর বয়সে আমি। আনমনা হাটছিলাম আমাদের বাড়ীর পাশে লাগানো দক্ষিনে ফলের বাগানে।বাড়ীর দক্ষিনে পুরোটায় নানা ধরনের দেশী ফুল ও ফলের গাছে পরিপূর্ন।আর দাদা ও দাদির হাতে লাগানো বাড়ীর বাগানে নানা ধরনের আমের গাছ।কি নেই এই বাগানে আঠার ধরনের জাতের নানা নামের আম সহ , কাঠাল, জাম, জাম্বুরা, জামরুল, আনারস, আতা,লিচু, বরই, বাতাবী লেবু, কামরাঙ্গা, নারিকেল, সফেদা, তেতুল, পেয়ারা, আমলকি, আরও কতকি।গাছের ডালে নানা জাতের প্রজাপতি ও পাখী। নানা রং এর প্রজাপতি ও পাখীর সুমধুর ডাক সব মিলিয়ে দারুন অপরুপ সাজে সেজেছিল এই বাগান ও সেদিনের প্রকৃতি। পুরো বাগান নানা ধরনের ফুল ও মৌসুমী ফলে পরিপূর্ন ছিল।বাগানে ছিল ফুল ও ফলের সুগন্ধে মোহনীয় এক পরিবেশ।এ যেন নানা জাতের পাখী ও নানা রংয়ের প্রজাপতির অভয়ারন্য।আমি বিভোর হয়ে বাগানে হাটছিলাম। আনমনা প্রজাপতির রংগীন পাখা দেখতে দেখতে হাতে তুলে নিই চোট্র একটি পাথর।বাগানের সিন্দুর আম গাছ পেরিয়ে যেতে হঠাৎ খেয়াল হল অপরুপ এক সুন্দর পাখী জামরুল গাছের ডালে বসে আছে।মাথায় হঠাৎ দুষ্টমি ভর করল।মনের অজান্তেই হাতের পাথরটি পাখীটির দিকে নিশানা করে ছুড়ে মারলাম।কিছু বুঝে উঠার আগেই ছোড়া পাথরের আঘাতে তীব্র শব্দ করে নীচে মাটিতে এসে ঝপ করে ঠিক আমার পাশেই পড়ল।হঠাৎ এ ঘটনায় আমি হতবিহবল হয়ে চিন্তা করলাম দৌড়ে পালিয়ে যেতে।কিন্তু পরক্ষণেই মনেহল পাখীটি একটু একটু নড়াচড়া করছে দ্রুত পাখীটি তুলে নিয়ে, পুকুর ঘাটে গিয়ে আহত পাখীটার মাথায় পানি দিলাম।কিছুক্ষন পানি ঢালার পর পাখীটি ওর সুন্দর অপরুপ চোখ দুটো খোলে আমার দিকে তাকাল এবং ডানা ঝাপটিয়ে উড়তে চেষ্টা করল।আলতো করে ধরে পাখীটাকে চুপোচুপি ঘরে এনে রাখলাম।সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ছে।চারিদিকে রক্তিম আভা।আবার বাইরে গেলাম,হাতমুখ ধুয়ে আসার পথে মা দরজায় দাড়িয়ে জানতে চাইলো তুই এতক্ষন কোথায় ছিলি।কখনো মিথ্যা বলিনি মায়ের কাছে, কিছু গোপন না করে মাকে সব ঘটনা খুলে বললাম।আমি পাখীটাকে একটা খাঁচায় রাখতে চাই।মায়ের কাছে আবদার করলাম একটি সুন্দর খাচাঁ কিনে দেওয়ার জন্য।মা সব শুনে আমাকে বুঝিয়ে বলল,এ কাজটা খুব খারাপ হয়েছে।আমাদেরকে এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে হলে গাছ, বিভিন্ন ধরনের পাখী, প্রজাপতি এসব যারা প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে তাদের কে টিকিয়ে রাখতে হবে।আমাদের চারিপাশ পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে ।প্রকৃতিকে তার মত থাকতে না দিলে তার কঠোরতার শিকার হবো আমরা দারুন ক্ষতিতে পড়বে মানুষ।এখন থেকে আমরা সচেতন না হলে, আমাদের আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠার জন্য উপযুক্ত ভাল কোন পরিবেশ থাকবেনা।মা বলল দেরী না করে পাখীটাকে বাইরে নিয়ে ছেড়ে দিয়ে আস।আমি মায়ের কথায় সায় দিলাম।দুজনে মিলে পাখীটাকে আকাশে উড়িয়ে দিলাম।মুক্তি পেয়ে পাখীটি ডানা মেলে নীল আকাশে উড়ে গেল।সীমাহীন চুনতির নীল আকাশ।
Make sure you enter the(*)required information