মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলায় বরাবর একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসছিলো। এই অঞ্চলের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন না হওয়ার ফলে উন্নয়নের দিক থেকেও এই অঞ্চল তেমন একটা লাভবান হয়নি। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, এই একটি দল লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আসন থেকে বিজয়ী হয়েছে। যার ফলে এই এলাকা সরকারী অবকাঠামোগত উন্নয়নের বরাদ্দ পাওয়া থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। যা উন্নয়ন হয়েছে তা নামেমাত্র। তাছাড়াও চট্টগ্রাম-১৫ আসনের মধ্যে দু'টি উপজেলার একটি সাতকানিয়া অপরটি লোহাগাড়া। বারবার এই এলাকায় লোহাগাড়া উপজেলা তৃণমূল রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখলেও নির্বাচনী আসনে সাংসদ হয়েছেন সাতকানিয়ার মানুষেরা। লোহাগাড়া থেকে ঐ মানের নেতা তৈরি হতে পারেনি বা তৈরি হতে দেওয়া হয়নি। যাহোক যেভাবেই এই এলাকায় সাংসদ নির্বাচিত হউক, কিন্তু এই অঞ্চলে তেমন আহামরি উন্নয়ন কাজ হয়নি। তবে গত কয়েকবছর ধরে লোহাগাড়া উপজেলায় কিছু অভূতপূর্ব উন্নয়ন কাজ হয়েছে যা এতোদিনের পিছিয়ে পড়া লোহাগাড়া উপজেলাকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। লোহাগাড়ার সাধারণ মানুষ কখনো কল্পনা-ই করেনি যে, লোহাগাড়ার দৃশ্য এভাবে বদলে যাবে। এই অল্প সময়ের মধ্যে যেসব কাজ এই লোহাগাড়ার পরিমণ্ডলে হয়েছে তা দেশের অন্যান্য উপজেলার সাথে অনায়াসে তুলনা করা যায়। এসব উনয়নের পেছনে একমাত্র অবদান এই লোহাগাড়ার মাটিতে জন্ম নেওয়া এক কীর্তিমান ব্যক্তি বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব প্রয়াত মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, বীর বিক্রম, ওএসপি, পিএসসি। এই মানুষটির হাত ধরে লোহাগাড়ার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ করা হয়েছে। একজন সামরিক সচিব প্রধানত রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দিক নিয়ে শুধু দেখভাল করার কথা। কিন্তু এই মানুষটির প্রজ্ঞা, সচ্চরিত, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার জন্যই তিনি সামরিক সচিব পদে বসেও রাষ্ট্র পরিচালনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রীর এতোটা আস্থাভাজন আর কেউ হয়ে উঠতে পারেননি। রাষ্ট্রীয় এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত এই নিরহংকারী মানুষটি এক মুহূর্তের জন্যও নিজ জন্মস্থান চুনতি তথা লোহাগাড়াকে ভুলে যাননি। যার দরুন তিনি আমৃত্যু পর্যন্ত দেশের মানুষের সেবা ও কল্যাণের পাশাপাশি এই জনপদের মানুষেরও নিরলসভাবে সেবা করে গেছেন। এই মানুষটিও বঙ্গবন্ধুর ন্যায় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশের স্বপ্ন দেখতেন। তাই তাঁর ব্যক্তিজীবনেও এর ছাপ পরিলক্ষিত। মানুষটির সর্বশেষ স্বপ্ন ছিলো চুনতির বুকে একটি এগ্রো বেইজড কৃষি খামার গড়ে উঠবে। যেখানে চুনতির মানুষ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা কাজ করার মাধ্যমে এদেশের কৃষি উন্নয়নে বিস্তর ভূমিকা রাখবে। হয়তো তিনি এই চুনতিতেই একটি কৃষি বিপ্লব ঘটিয়ে বাংলাদেশকে একটি বাস্তব কৃষিপ্রধান দেশ ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে নবরূপে আত্মপ্রকাশ করার চিন্তা মনে অংকন করেছিলেন। কিন্তু মানুষের সব স্বপ্ন পূরণ হয় না। মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তাই তাকেও হঠাৎ একদিন মহান রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দিতে হয়েছিলো। মানুষটি ইন্তেকাল করার পর শুধু এই চুনতি নয় সারা বাংলাদেশ একজন জয়নুল আবেদীনের অভাব অনুভব করছে। একটা মানুষের নেতৃত্বদানের গুণাবলি এতোটা শক্তিশালী হতে পারে। সত্যি এটা বলা অনুচিত হলেও আজকে বলতে হচ্ছে। কারণ মানুষটিকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। কীর্তিমানের নাকি মৃত্যু নেই। তেমন একজন কীর্তিমানের জ্বলন্ত উদাহরণ জয়নুল আবেদীন। কারণ মানুষটির শরীর আমাদের সামনে না থাকলেও তাঁর প্রতিটি কাজ তাঁর পবিত্র শরীর হয়ে আমাদের সামনে এখনো জীবন্ত। তাঁর করে যাওয়া কাজগুলো এখনো তাঁকে আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রেখেছে। আজকে এক বছর পরে এসেও এই মানুষটির কথা বলছি কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। বরং মানুষটির কাজগুলো বারবার তাঁর আদর্শের দিকে আমার মতো হাজারো তরুণকে টানে। আজকে হঠাৎ চুনতি সরকারি মহিলা কলেজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম আমার চোখের সামনে পড়ে। চুনতির মতো একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত নারীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য চুনতি মহিলা ডিগ্রি কলেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। এতে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষার ইতিহাস রয়েছে। চুনতির এই মহিলা কলেজটি লোহাগাড়ার একমাত্র মহিলা কলেজ। এই কলেজটি যাতে নারীদের শিক্ষাদানে আরো ভূমিকা রাখতে পারে সেদিকটা বিবেচনা করে সরকারীকরণ করা হয়। এই সরকারীকরণের পেছনে রয়েছে এই মানুষটির একনিষ্ঠ ভূমিকা। চুনতির বুকে এই মানুষটির জন্ম না হলে হয়তো চুনতি এতোটা আলোকিত হতে পারতো না। শুধু চুনতি নয়; এই মানুষটির জন্য লোহাগাড়াবাসী তথা চট্টগ্রামবাসী অনেক উপকৃত হয়েছে। এই মানুষটি প্রয়াত হওয়ার পর থেকে মানুষের দীর্ঘশ্বাসের শেষ নেই। এখানেই মানুষটির মানুষের সাথে গভীর প্রেমের প্রমাণ মেলে। আল্লাহ এই মানুষটিকে বেহেশত নসীব করুক। আমীন।
Make sure you enter the(*)required information