মানুষের চিরাচরিত স্বভাব সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ। আর স্বর্ন হচ্ছে মানব জাতির সবচেয়ে বেশি সমাদৃত ও মূল্যবান ধাতুর নাম। আর এই ধাতু দিয়ে তৈরী মানব সভ্যতার প্রতিটা উপকরণ একসঙ্গে মূল্যবান ও সৌহার্দ্য মণ্ডিত। তাই মানব সভ্যতার যুগে যুগে সমৃদ্ধির সাক্ষী হিসেবে স্বর্নকে আগুনে গলিয়ে সুনিপুণ কারুকার্যে শোভিত করে সর্বাগ্রে উপস্থাপন করে। তেমনি চুনতির শত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য এর সমৃদ্ধির সাক্ষী হিসেবে নানান সময় চুনতির সোনার ছেলেদের 'কর্ম তৎপরতা ও উপস্থাপন' সভ্যতার উত্তরণের সমৃদ্ধির সাক্ষী হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। তাদের মধ্যে অন্যতম আমার ছোটমামা জান্নাতবাসী মরহুম মুহাম্মদ হাসান ( মদুনু মামা) সাহেবের সামাজিক কর্ম তৎপরতা চুনতির ইতিহাস ঐতিহ্য এর সমৃদ্ধির সাক্ষী। মামার শারীরিক গঠনের সৌন্দর্যের পাশাপাশি কথা বলার স্টাইল ও ব্যক্তিত্ব যেকোনো মানুষকে আকৃষ্ট করতো। উনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যবসায়িকভাবে প্রতিষ্ঠিতি ও সুনিপুণ উপস্থাপনা যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যমনি হিসেবে অন্যনমাত্রা যোগ হতো। চুনতির প্রতিটি সামাজিক উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ডের সুনিপুণ পরিচালনায় মামার অন্যন অবদান ইতিহাসের সাক্ষী। চুনতির সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে যেকোনো সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে মামার অংশগ্রহণ ছিলো অবশ্যক। আর্থমানবতায় 'চুনতি চুক্ষু শিবিরের' মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও 'চুনতি সরকারি মহিলা' কলেজের প্রতিষ্ঠাতার অন্যতম উদ্যোগতা হিসাবে উনার নাম সবসময় উচ্চারিত হবে। উনি আমার মাযের প্রায় ৮-১০ বৎসরের বড়। মামার আগমন ঘটতো সীরত মাহফিলের যেকোনো মিটিং এর সময়। উনার আগমনে মায়ের চেহেরায় আলাদা আনন্দ অনুভব হত। মামার জীবন যাপন শহর মুখি হওয়া সত্ত্বেও চুনতির শাহ সাহেব কেবলা (রাহঃ)’র প্রবর্তিত ১৯ দিন ব্যপী সীরতুন্নবী (সঃ) মাহফিলের সকল কাজে নিজেকে পুরোপুরি সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। বিশেষ করে মাহফিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চুনতিতে অবস্থান করে যাবতীয় কাজের আনজাম দিতে সার্বক্ষণিক নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। মামার জীবন যাপনের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুণছিল সকল ক্ষেত্রেই পরিপাটি মনোভাবের প্রতিফলন ঘটানো। মাহফিলের জিয়াফত বিভাগের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় শৃংখলা থেকে শুরু করে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা পর্যন্ত মামার সর্বক্ষণিক পদচারণায় মুখর থাকতো। বিশেষ করে চুনতির আপামরসাধারণকে নিয়ে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মাহফিলে আগত মেহমানের মেহমান নেওয়াজিতে উনার জীবনের পূর্ণ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা উজাড় করে দিয়েছিলেন। মেহমানরা যাতে সবসময় ভালো সেবা পায় তার জন্য উনি সদা সচেষ্ট ছিলেন। মাহফিল পূর্ববর্তী ও শুরুর দিকের কিছু দিনের বিশাল খরচের আনজাম দিতে মাহফিল কতৃপক্ষের হিমসিম খেতে হয়। যা মাহফিলে আগত মেহমানের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপার সামলানো কিছুটা কষ্টকর হতো। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরনে চুনতির আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ ও মাহফিলের সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে মাহফিল পূর্ববর্তী খরচের বাজেটকে সাময়িক আর্থিক সহায়তা প্রধানের জন্য একটি 'চুনতি সীরাত মাহফিল মুবালাইজেশন ফান্ড' গঠন করেছিলেন। মাহফিলের প্রাথমিক প্রস্তুতিতে আজও অব্দি উনার সেই উদ্যোগের সুফল চলমান। এই ক্ষণজন্মা মহত ব্যক্তি সারাজীবন আশেকে রাসুল মুজাদ্দিদে মাহফিলে সিরাতুন্নবী (সঃ) হযরত শাহ হাফেজ আহমদ (রাহঃ) কেবলার প্রবর্তিত সকল মাহফিলের আনজামে শারীরিক মানসিক ও আর্থিকভাবে নিজেকে পুরোপুরি সম্পৃক্ত রেখে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। আল্লাহ আপনি মামার উক্ত সকল ভালো কাজের উসিলায় উনার সকল আত্মীয় স্বজন পরিবারবর্গকে দুনিয়া ও আখেরাতের সফলকাম করুন।আলমগীর ভাইয়ের কমেন্ট থেকে ঃমদনু মামার সুন্দর চেহারা, বাচনভঙ্গি এবং ব্যক্তিত্ব বংশগত আভিজাত্যের পরিচায়ক। চুনতির যে কয়েকজন স্মার্ট মানুষ তন্মধ্যে তিনি প্রণিধানযোগ্য। উনার একটা বিশেষ গুণ ছিল তিনি যখন কথা বলতেন শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারতেন। সুন্দর চেহারা ও কথা বলার স্টাইল সবাইকে আকৃষ্ট করতো। তিনি শহরে এবং গ্রামে একজন সামাজিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। উনার বাসস্হান শেরশাহ আবাসিক সোসাইটিতে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। উনাকে সবাই সমীহ করতো। তিনি ও আমার মেঝ মামা হাবিব উল্লাহ ছিদ্দিকী একই দিনে জন্মগ্রহণ করেন বলে আম্মার কাছ থেকে শুনেছি। মেঝ মামা ও ছোট মামা ছলিম উল্লাহ ছিদ্দিকীর সাথে উনার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এছাড়াও আমাদের পরিবারসহ আমার মামা ও খালাদের পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক ছিল। আমার মনে আছে, উনার বিয়ের পর মামীকে নিয়ে আগ্রাবাদে আমাদের টি এন্ড টি কলোনির বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। আব্বার সাথে মদনু মামা ও আহমদু মামার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।মদনু মামা চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সেনা কর্মকর্তাদের সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। উনার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কয়েকজন সিনিয়র উচ্চ পদস্হ আর্মি অফিসারের পরিচয়ে তিনি ক্যান্টনমেন্টে বিশেষ গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। সিনিয়র অফিসার সহ কয়েকজন আর্মি অফিসারের সাথে মদনু মামার পারিবারিক সম্পর্কও তৈরি হয়েছিল। আত্মীয় স্বজন, এলাকাবাসী ও পরিচিত লোকদের বিপদ আপদে যেখানে আর্মি অফিসারের সাহায্য সহায়তার প্রয়োজন পড়েছে তিনি সে সম্পর্ক কাজে লাগিয়েছেন। পরবর্তীকালেও তিনি অনেকের উপকারে এসেছেন।মদনু মামা ও আহমদু মামার সীরতুন্নবী (সঃ) মাহফিলে অপরিসীম অবদান চিরস্মরণীয়। মদনু মামা পারিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে যতটুকু ভূমিকা রাখা দরকার তার চেয়েও অনেক বেশি কাজ করেছেন। এখানে স্বল্প পরিসরে সবকিছু বলার সুযোগ নেই। অনেক আগে থেকে উনার বাসায় মাহফিলের ঘরোয়া বৈঠক হতো। মামীর সহযোগিতা ছিল সব সময়। উনার মেহমানদারি মনে রাখার মতো।সীরত মাহফিলের 'মোবালাইজেশন ফান্ড' গঠন এবং মাহফিলের কার্যক্রমে চুনতির ক্লাবগুলোকে সম্পৃক্তকরণে উনার বিশেষ ভূমিকা ছিল। প্রতিবার মাহফিল শুরু করার দিকে যে অর্থ সংকট দেখা দিত মোবালাইজেশন ফান্ড গঠনের পর তা রিকোভার করা সম্ভব হয়েছে। ক্লাবগুলোকে সম্পৃক্ত করার পর ক্লাবের মাধ্যমে মাহফিলে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং ক্লাবের মাধ্যমে গরু সংগ্রহ ও চাঁদা সংগ্রহ করা হয়ে আসছে। যা মাহফিলের কার্যক্রমে অতিরিক্ত সংযোজন। এসব উনার কাজের বড় সাফল্য। তিনি জীবনের শেষের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মৃত্যুর কয়েক মাস পূর্বে উনার কাজে আমাদের অফিসে (কর্ণফুলী গ্যাস) এসেছিলেন। তখন বেশ শুকিয়ে গেছেন। উপরে উঠে বেশ ঘামাচ্ছিলেন। উনার এই অবস্থা কেন জানতে চাইলে বললেন, হার্টের সমস্যা। আমি উনাকে বিশ্রামে থাকতে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মত চলতে অনুরোধ করি। এর আগে উনার সাথে মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হতো। গ্যাস লাইন সংক্রান্ত একটি বিষয়ে আমাকে ফোন করতেন। উনার সাথে আমার অফিসে সেই শেষ দেখা। তিনি আমাদের মাঝে না থাকলেও স্মৃতিতে সদা উজ্জ্বল। আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন।
Make sure you enter the(*)required information