মানবতাবাদী একজন সমাজ কর্মীর পরম পাওয়া, সর্বসাধারণের মধ্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে, তাদের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে, তাদের সাহায্যার্থে নিজেকে উজাড় করে বিলিয়ে দেওয়া। এরা সাদা মনের মানুষ। রক্তের শ্বেত কনিকার মত শরীরের যেই জায়গায় সাহায্য প্রয়োজন সেখানেই তাদের বিচরণ। তারা সদা প্রফুল্ল, হাস্যোজ্জল, প্রানবন্ত, নিরহংকারী, স্পষ্টবাদী, কর্মবীর। তাদের উপস্থিতি চারিদিকের পরিবেশকে করে সতেজ। মানব সমাজ এদের কর্মতৎপরতার উপর নির্ভরশীল। চুনতি সমাজে তেমনি একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় চাচা জান্নাতবাসি মরহুম কাজী বশির আহমেদ (বশির হাক্কু) সাহেব। তাঁর কর্মতৎপরতায় মুখরিত থাকতো চুনতির সমাজ ও চুনতির শাহ সাহেব কেবলা (রাহঃ)’র প্রবর্তিত ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরাতুন্নবী (সঃ)। চুনতির ছেলেদের দুই ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, একটা পারিবারিক আর একটা সমাজিক। তাদের সমাজিক জীবনের চরিত্র গঠনের হাতেখড়ি হয় চুনতি মুন্সেফ বাজারে আসার মাধ্যমে। উক্ত বাজারের পরিবেশ আর দশটি বাজারের মত নয়। এই বাজারের দোকান মালিকসহ খরিদ্দারদের সবাই একজন আর একজনের সাথে একাধিক আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। কাজেই খরিদ্দার ও দোকান মালিক, খরিদ্দার এবং খরিদ্দার একজন আর একজনের ভাই, মামা, চাচা বা বাবা। তাই পরিবেশটা সহনশীল, সম্মান, সৌজন্য, ভাতৃত্ব বোধের উপর স্থিতিশীল। অনেক সময় চির চেনা একজনকে অচেনা মনে হয় এখানে। পারিবারিক সম্পর্ক পেরিয়ে ছেলে বাবাকে, ছোট ভাই বড় ভাইকে, ভাগিনা মামাকে, ভাইপো চাচাকে নতুন পরিচয়ে চিনতে শিখে, তাদের অনুকরণীয় বৈশিষ্ট্যে নিজেকে রাঙানোর বীজ বোনে। বশির হাক্কুর পরিবারে সাথে আমাদের পরিবারের সম্পর্ক শুধুই আত্মীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বশির হাক্কুর সাথে বাবার, চাচী আম্মার সাথে আমার মায়ের বন্ধুত্ব। উনার বড় মেয়ের সাথে আমার মেজো আপার, আর উনার ছেলেদের সাথে যথাক্রমে আরিফ ভাই - আজাদ ভাই, সাহেদ ভাই - নেজাত ভাই, লতিফ ভাই - সুজাত ভাই এবং শরিফ - আমি, আর আমরা সহপাঠী, বন্ধু, খেলার সাথী। পারিবারিক জীবনে উনি কম কথা বলা পছন্দ করতেন। প্রায় সময় নিজের ছেলেদের মন-মেজাজের খবর আমি সহ আমার ভাই বোনদের থেকে নিতেন যার যার বন্ধুদের খবর । উক্ত খবরে আফসোস করতেন বা আনন্দিত হতেন। চুনতি মুন্সেফ বাজারে আমাদের সামাজিক জীবনের যখন হাতেখড়ি তখন বশির হাক্কু চুনতি সামাজ নেতৃত্বের মধ্য গগনে। তখন উনার কর্মতৎপরতায় মুখরিত চুনতির সমাজ। উনার সামাজিক চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সাধারণ মানুষের সাথে কথাবার্তায় মুখরিত, একাকার হয়ে গিয়ে তাদের একান্ত চাহিদার খোঁজ খবর নিয়ে তা আনজাম দেয়া। যেটি উনার পারিবারিক স্বভাবের ঠিক উলটো। উক্ত আচরন আমাদেরকে যেমন সামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধ করতো তেমনি উনার ছেলেদেরকেও। উনি এই দুনিয়ায় বেঁচে না থাকলেও উনার ছেলেরা আজ চুনতির সামাজিক কাজে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন। এ যেন বাবার সামাজিক চারিত্রিক গুণ ভাগ করে নিয়ে আপন মহিমায় একাকার। সিরাত মাহফিলের যেকোনো কাজ খুব আনন্দ নিয়ে করতেন। এর পেছনের কারণ উনি সব সময় বলে বেড়াতেন। উনি বলতেন এক সময় উনার আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান ভালো ছিল না। যখন থেকে মাহফিলের সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন তখন থেকে আর্থিক সচ্ছলতা ও জীবনের পথ চলা সহজ হয়েছে। উনার উপস্থিতি মাহফিলের সাথে সম্পৃক্ত সকলের জন্য ঈদের আনন্দের আমেজ নিয়ে আসতো। মাহফিলের যেকোনো মিটিং এ উনার বক্তব্য অনেক আকর্ষণীয় ও প্রানবন্ত হতো। তাছাড়া মাহফিলের রন্ধন বিভাগের স্বেচ্ছাসেবী কর্মী, যারা রান্নার চুলার আগুনের প্রচন্ড তাপে কঠিন পরিশ্রম করে, মাহফিলে আগত হাজারো মেহমানের খাওয়া ব্যবস্থা করতে দিন রাত ১৯ দিন যাবত অকাট্য খাটুনি করতেন। বশির হাক্কু ওদের সাথে মিশে গিয়ে বন্ধু সূলভ আচরণের মাধ্যমে তাদের সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করতেন। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত চুনতির শাহ সাহেব কেবলা (রাহঃ)’র প্রবর্তিত ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরাতুন্নবী (সঃ) এর সাথে সম্পৃক্ত থেকেছেন। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ আমার বশির হাক্কু ও তাঁর পরিবার পরিজনদের সকল ভালো কাজের পূর্ণ প্রতিদান দিন।
Make sure you enter the(*)required information