ইসলামী অনুশাসন পুরোপুরি মেনে চলার মাধ্যমে পার্থিব ও পরকালীন জীবনে মুক্তি লাভের আগ্রহী প্রতিটি মুসলিম এটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মধ্যে গোটা মানব জাতির সকল বিভাগের যাবতীয় সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধান নিহিত রয়েছে। আন্যথায় এটিকে নিছক 'এ কম্প্লিড কোড অফ লাইফ' বা 'একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান' হিসেবে বিশ্বাস করা বা দাবি করা অবান্তর। এ সকল বিভাগের মধ্যে আমাদের অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাতের ইসলামীকরণ অন্যতম। অর্ধ শতাব্দী আগে যাঁরা প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ইসলামী আইনে নিষিদ্ধকৃত রিবা (সূদ), গরর (অনিশ্চয়তা, অসচ্ছতা ও অত্যাধিক ঝুঁকি) মাইসির (জুয়া) ইত্যাদি থেকে মুক্ত করে ইসলামী শরী'আহর ভিত্তিতে পরিচালনা করার জন্য অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে একটি যৌক্তিক সমাধানের পথনির্দেশনা দিয়েছিলেন এই মুহূর্তে আমি সেই পথিকৃৎদেরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, এবং দু'আ করি এই অনন্য অবদানের জন্য মহান আল্লাহ তাঁদেরকে উত্তম জাযা দান করুন।আজ এই পুরোধাদের প্রায় সকলেই মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর সান্নিধ্যে ফিরে গেছেন। কিন্তু অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, মশালবাহী (torch bearers) হিসেবে তাঁদের সেই অসমাপ্ত মিশনকে দৃপ্ত শপথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁদেরই উত্তরসূরী এক ঝাঁক উদ্যমী, সাহসী ও ত্যাগী ইসলামিক স্কলার এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের ইসলামী ব্যাংক, শরী'আহর মানদন্ড নির্ণায়ক সংস্থা (standards setter organisations) এবং বিশেষায়িত শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। আলহামদুলিল্লাহ। তবে এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এ মহৎ প্রচেষ্টার সাথে যাঁরাই জড়িত ছিলেন বা আছেন তাঁরা সকলেই আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলায়হিস্ সালামের সন্তান, রক্তপিণ্ডের মানুষ। তাঁরা ফেরেশতার দলে অন্তর্ভুক্ত নন, অতএব কেউ-ই মানবীয় ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে নন। তদুপরি, এটিও মনে রাখতে হবে যে, প্রথাগত সুদী ব্যাংকগুলো একশো বছর ধরে বাজারে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসলে ও তারা আজ অবধি ত্রুটিমুক্ত হতে পারে নি। শুধু তাই নয়, এদের অনেকগুলো কর্পোরেট ব্যাংক কালের পরিক্রমায় ইতিমধ্যেই দেউলিয়া হয়ে ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ করেছে। সে তুলনায় অনেক বছর পরে আসা ইসলামী ব্যাংকগুলোর সাফল্য তুলনামূলক ভাবে অমলীন, যদিও অত্রুটিমুক্ত। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ইসলামী ব্যাংকিং প্রেকটিসকে সুদসহ অন্যান্য শরীআহ বিরোধী ঝুঁকি সমূহ (Shari'ah non-compliance risks) থেকে মুক্ত করতে বিভিন্ন মহলের নিরলস প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে।ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার তত্বের (theory) আলোকে প্রায়োগিক দিককে (practical part) ঢেলে সাজানোর এত ত্যাগ-তিতিক্ষা, নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা এবং কঠোর সাধনার পর ও এর গঠনমূলক সমালোচনা, সংশোধনের নিমিত্তে বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রস্তাবনা থাকাটাই স্বাভাবিক, এবং একে সংশ্লিষ্ট সকলের সাধুবাদ জানানো উচিত। তবে এসব আলোচনা, সমালোচনা ও বিতর্ক যেন নিছক সমালোচনার জন্য না হয়, বরং আন্তরিক এবং যৌক্তিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করার (to find a way out) জন্য-ই হয়। বস্তুত ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে তুলোধুনো করে 'এটি এ যুগে সম্ভব নয়' বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা গোটা ইসলামী অর্থ ব্যবস্থাকেই অস্বীকার করার নামান্তর। সমালোচনাকারীদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ, শুধু মাত্র সমালোচনার জন্য সমালোচনা না করে এ ব্যবস্থায় কোথায় কোথায় ত্রুটি বিচ্যুতি, অসামঞ্জস্য ও মিসনোমার বিরাজমান দয়া করে সেগুলো চিহ্নিত করুন এবং কিভাবে এসব ত্রুটি (flaws) দূর করা যায় তার সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্ট পথ বাতলে দিন। এটি স্বীকার করতে বাধা নেই যে, প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্থান, কাল, পাত্র ও পরিবেশ ভেদে ইসলামী ব্যাংকগুলোর নানামুখী সমস্যা ও চ্যালেন্জ রয়েছে, এবং এসব চ্যালেন্জ মোকাবেলা করে এ বিশ্ব প্রতিযোগিতার বাজারে তাদের শুধু যে টিকে থাকতে হবে তা-ই নয়, বরং Devine system এর অংশ হিসেবে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব (superiority) ও প্রমাণ করে দেখাতে হবে। তবে কোন অবস্থাতেই সেটি শরী'আহর নীতিমালা লঙ্ঘন করে নয়। প্রায়োগিক ক্ষেত্রের অসংগতি ও শরী'আহ পরিপালনের ত্রুটির দ্বারা কোনো কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া অযৌক্তিক, অনভিপ্রেত ও injustice হবে যে, এ যুগে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাস্তবায়ন মোটেও সম্ভব নয়।Abu Umar Faruq Ahmad, PhDLead Professor, Guidance College, Texas, USAEmail: aufahmad@gmail.com
Make sure you enter the(*)required information