সময় ১৯৭৩।আমি চুনতি হাকিমিয়া প্রাইমারি বিদ্যালয়ের ছাত্র।বিদ্যালয় থেকে ফিরে দুপুরে ঘুম শেষে তারপর হাটছি।রোদেলা দুপুর।সময় ৪টার ও কিছু পরে সূর্য দক্ষিন পশ্চিমে হেলে আলো ছড়াচ্ছিল।বিকেলের রোদ এসে পড়েছে প্রান্তরে, বাগানের ঘন সবুজ বনানীর গায়ে।আনমনা হাটছিলাম বাড়ীর দক্ষিনে ফলের বাগানে।বাগানের সিন্দুর আম গাছ পেরিয়ে যেতে হঠাৎ খেয়াল হল অপরুপ এক সুন্দর পাখী জামরুল গাছের ডালে বসে আছে।হাতের পাথরটি ঐ পাখীর দিকে নিশানা করে ছুড়ে দিলাম, ছোড়া পাথরের আঘাতে তীব্র শব্দ করে গাছ থেকে নীচে মাটিতে এসে পড়ল।হঠাৎ এ ঘটনায় হতবিহবল হয়ে চিন্তা করলাম দৌড়ে পালিয়ে যেতে।কিন্তু পরক্ষণেই খেয়াল হলো পাখীটি একটু একটু নড়াচড়া করছে।দ্রুত পুকুর ঘাটে গিয়ে আহত পাখীটার মাথায় একটু একটু করে কিছুক্ষন পানি ঢালার পর পাখীটি ওর সুন্দর অপরুপ চোখ দুটো খোলে আমার দিকে তাকাল এবং ডানা ঝাপটিয়ে উড়তে চেষ্টা করল।পাখীটাকে ছেড়ে না দিয়ে চুপি চুপি ঘরে এনে রাখলাম।সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ছে।চারিদিকে রক্তিম আভা।হাতমুখ ধুয়ে আসার পথে মা জানতে চাইলো তুই এতক্ষন কোথায় ছিলি।মাকে সব ঘটনা জানিয়ে মায়ের কাছে আবদার করলাম একটি খাচাঁ কিনে দেওয়ার জন্য।পাখীটিকে ঘরে খাচাঁয় বদ্ধ করে রাখার জন্য। মা সব শুনে আমাকে বুঝিয়ে বলল,এ কাজটা খুব খারাপ হয়েছে।মানুষকে এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে হলে গাছ , বিভিন্ন ধরনের পাখী, প্রজাপতি , ব্যাঙ,কীট পতঙ্গ এসব যারা প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে তাদের কে বাচিয়ে রাখতে হবে।ওরা বাচঁলে প্রকৃতি বেচে থাকবে ।আমাদের চারিপাশ পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে।এখন থেকে আমরা সবাই সচেতন না হলে, আমাদের আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠার জন্য উপযুক্ত ভাল কোন প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকবেনা।মা বলল দেরী না করে পাখীটাকে বাইরে নিয়ে ছেড়ে দিয়ে এসো।প্রকৃতিকে তার মত থাকতে না দিলে তার কঠোরতার শিকার হয় মানুষ। এ শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েদের দেওয়া প্রত্যেক অভিভাবকের অবশ্য কর্তব্য।দেরী না করে মায়ের কথায় সায় দিলাম।নিজের ভুল বুজতে পারলাম।মা ছেলে দুজনে মিলে পাখীটাকে নীল আকাশে উড়িয়ে দিলাম।মুক্তি পেয়ে পাখীটি ডানা মেলে নীল আকাশে উড়ে গেল।সীমাহীন নীল আকাশ।আমার শৈশব জীবনের বাস্তব ঘটনা।আজ আমার মা বেচেঁ নেই।তবে আমার মায়ের সেই সময়ের দেওয়া শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ বাণী সব নিয়ে আমার সেই মায়াময় প্রিয় গ্রাম চুনতি আজ পৃথিবী বিখ্যাত।এখানে আছে মা গর্জন গাছের ভূমি,মা হাতীর প্রজনন স্থান,বন ও জীব রক্ষায় সহ ব্যবস্থাপনায় সফলতার স্বীকৃতি স্বরুপ জাতিসঃঘ ইকুয়েটর পুরস্কার ২০১২ অর্জন কারী পৃথিবী বিখ্যাত চুনতি অভয়ারণ্য। (পৃথিবীর সকল মা এবং আমার মা ও বাবার জন্য সবাই মহান আল্লাহের দরবারে দোয়া করার জন্য বিনীত অনুরোধ রইলো।)
Make sure you enter the(*)required information