আইঁ (আমি ) সোলেমান
লেখক: ছাইফুল হুদা সিদ্দিকী
খুব ভোরে বাসার নীচের গেইট এ কেউ একজন খুব জোরে জোরে আমার নাম ধরে ডাকছে আর মাঝে মাঝে বলছে আইঁ (আমি ) সোলেমান । এতো সকালে কে এলো জানতে দক্ষিণের বারান্দায় গিয়ে নীচের গেইট দেখলাম একজন বয়স্ক লোক আমাদের বাসার গেইট এর বাইরে দাড়িয়ে । আমরা তিনতালায় থাকি ওকে উপর থেকে বললাম আমি নীচে আসছি আপনি একটু ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করেন । নীচে নেমে অবাক হলাম এ হলো আমাদের সোলেমান ভাই যিনি কিনা সেই ৬০/৭০এর দশকে আমাদের জয়নগর বাসায় থাকতো । আমার বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় সে নিয়মিত আমাদের বাড়ীতে আসতো বলেই সহজে উনাকে চিনতে পারলাম তবে বয়সের ভাড়ে কিছুটা দুর্বল ও শুকনা লাগছে । উনাকে নিয়ে বাসায় ড্রইং রুমে নিয়ে বসলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম আপনি এতোদিন পরে কোথায় থেকে এলেন এবং কি খবর ? কেমন আছেন ? ও যেটা জানালো আমার শ্রদ্ধেয় চাচা হাজী মহিউদ্দিন সিদ্দিকী প্রকাশ বুধুহাজী( যিনি সম্প্রতি এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মৃত্যু বরণ করেছেন) ওকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন । ওর মেয়ে ও নাতি নাতনিকে নিয়ে চিটাগাং মেডিকেলে এসেছে এবং অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ওর নাতি ও নাতনি রক্তে ধরা পড়েছে একটি জটিল রোগ যার নাম থ্যালাসেমিয়া। এটি একটি বংশগত রোগ। এই রোগ শরীরে রক্তস্বল্পতা সৃষ্টি করে যা রক্তের মধ্যে ত্রুটিযুক্ত হিমোগ্লো-বিনের জন্য হয়ে থাকে। হিমোগ্লোবিন মানুষের রক্তের খুব দরকারি একটি উপাদান। এটি রক্তের একটি বিশেষ রঞ্জক পদার্থ যা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহণ করে। স্বাভাবিক মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিন সাধারণত দুটি আলফা ও দুটি বিটা চেইন বহন করে। এই দুটি চেইনের যেকোনো একটি পরিমাণে কম থাকলে সৃষ্টি হয় থ্যালাসেমিয়া রোগের।থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎস বলতে রক্ত পরিসঞ্চালন। সোলেমান ওর নাতি ও নাতনিকে দুইজনকে নিয়ে এসেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসাপাতালে রক্ত দেওয়ার জন্য । ও আমার কাছ থেকে কিছু আর্থিক সাহায্য চাইল আমি আমার সাধ্যের মধ্যে হওয়াতে ঐ দিন ওর চাহিদার শতভাগ পূরণ করেদিলাম । আর দুতিনদিন পরে ও এসে জানালো আজ ওরা বাড়ীতে মানে লোহাগাড়ায় চলে যাচ্ছে ।আমি ওদের জন্য আর কিছু টাকা দিলাম যাতে ওরা কিছু খেতে পারেএর মাস তিনেক পরে আবারও ভোরে আমাদের গেইট সোলেমানর সেই ডাকাডাকি । আজ সে বসবেনা ডাক্তার বলেছে দ্রুত তদের রক্ত বদলাতে হবে নতুবা সামনে সমূহ বিপদ ।তাকে দ্রুত রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে এবং জরুরী টাকার দরকার এবার একটু বেশী করে টাকা দিলাম তার নাতি নাতনির চিকিৎসার জন্য।সেও খুশী মনে সকাল বেলায় বিদায় নিলো কিন্ত তার পরেরদিন সকালে আবার আসলো এবং জানালো ওকে গতকাল যা টাকা দিয়েছিলাম তা মেডিকেলে রাতে সব খুইয়েছে । কে বা কারা রাত্রে তার পকেট থেকে সব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কি আর করা আবার তাকে কিছু টাকা দিলাম এরপর গত দু তিন বৎসর সোলেমান কোন সময় বিনি চাউল, সীমেরবিচি , কিংবা একটা লাউ বা পাকা পেপে নিয়ে সে আমাদের বাসায় নিয়মিত আসতো এবং আমার পক্ষে যতদুর সম্ভব আমি ওকে সাহায্য করতাম একদিন তার নাতনি রহিমা ফোন করে জানালো জরুরী রক্তদাতা দরকার রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ আমিও সাথে সাথে রোটারেক্ট ক্লাব অব লেকসিটির ক্লাবের দুজন সদস্যকে ফোন করলাম ওরা নিজেরাই গিয়ে দুব্যাগ রক্ত দান করে আসলো । আজ অনেকদিন হলো সোলেমান ভাইয়ের আর কোন দেখা নেই । ওর একটা মোবাইল নং ছিলো যেটাতে রিং করলে সাড়া শব্দ নেই । জানিনা সোলেমান ভাই এবং ওর নাতি ও নাতিন ওরা কেমন আছে ? যেখানেই থাকুক দোয়া করি ওরা ভালো থাকুক ।
অসাধারণ। আল্লাহ্ আপনাকে দুনিয়া ও আখেরাতের বিশেষ কল্যাণ দান করুন।
Make sure you enter the(*)required information