শীতে গুড়ের রসলিখেছেন:
ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকী |
ডিসেম্বর মাস শীত পড়ছে।আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ।সকালে সবুজ ঘাসে ভোরের শিশির আর সূর্যের আলো মিলে মিশে চিক চিক করছে।শীতের রাত্রে ঝরে পড়া শিউলি ফুলে আমাদের বাড়ীর উঠোন ধবধবে সাদা।আমাদের বাড়ীর সামনেই শিউলি গাছ ছিল।আর উঠোন পুরোটা নানা ধরনের ফুলের বাগান।তিন রংয়ের গোলাপ ছিল এই বাগানে।লাল,কালো ও হলুদ রংয়ের গোলাপ আর শীতের নানা জাতের নানা রংয়ের ফুলে পরিপূর্ন ছিল পুরো বাগান।সব কিছু পেছনে রেখে আজ আমরা যাচ্ছি নানার বাড়ী বেড়াতে।পরীক্ষার পর প্রতি বৎসর আমরা নানার বাড়ীতে বেড়াতে যায়। নানার বাড়ী চট্রগ্রাম শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট এলাকায়।নানা বাড়ীর পশ্চিমে বিশাল সমুদ্র সৈকত।নানার বাড়ীতে শীতে নানা ধরনের পিঠা তৈরী হতো।এই পিঠার মজাই আলাদা ছিল।তরতাজা খাটি খেজুর রস নানুদের নিজস্ব বাগানের খেজুর গাছের রস দিয়ে এই পিঠা আমরা খেতাম।এ বিষয়ে আর একদিন লিখব আশারাখি।যার কথা আজকে লিখছি উনি আমাদের মামা।আমাদের থেকে বয়সে তিন চার বৎসরের বড়।না আজকে উনার নাম এখানে লিখা যাবেনা।তবে আমি এখানে উনার নাম দিলাম সাজু মামা।সাজু মামার পুরো শরীর খুব হাল্কা পাতলা ছিল।উনার শরীরের হাড় গুলো সহজ একটা একটা গুনে নেওয়া যেতো।বলা যায় ইদানিংকার ভারতের নায়িকাদের চেয়ে বেশী হাল্কা পাতলা ছিল উনার শরীর।খেজুর গাছে উঠে গাছ কাটা, গাছে কলসী লাগানো আর খুব ভোরে রস নিয়ে আসা এসবে উনি ছিলেন খুব দক্ষ।সাজু মামা উনি খুব মজার মজার কাজ করে আমাদের আনন্দ দিতেন।বলতে হয় উনি খুব রসিক ছিলেন।(মামা এখনো বেচেঁ আছেন এবং খুব ভালো আছেন।)আমরা নানার বাড়ীতে পৌছে গেছি।দুপুরের ভাত খেয়ে সবাই আলাপে মেতেছি ঐ সময় সাজু মামা দৌড়াতে দৌড়াতে নানার বাড়ীর বসার ঘরে এসে বলল এই তোমরা কে আছ আমাকে বাচাঁও।আম্মা জানতে চাইল কিরে তোর আবার কি হয়েছে?মামা বলল একটা লোক খালি চটের বস্তা নিয়ে আমাকে দৌড়াচ্ছে আমাকে ধরে নিয়ে যাবে।কেন ধরে নিয়ে যাবে?কি ব্যাপার ঘটিয়েছিস?কি ফাজলামো করেছিস ওর সাথে?ওর বস্তা লুকিয়ে রেখেছিস না কটমটি নিয়ে নিয়েছিস?মামা খুব গম্ভীর হয়ে জবাব দিল আমি কিছু করিনাইতো।ঐ লোকটি হাড্ডী ওয়ালা।আমাকে দেখে আমার শরীরের হাড় গুলো খুলে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।আমার শরীরে বাধার জন্য আমি এপেক্স ফোম কোম্পানিকে ফোম দেওয়ার জন্য বলেছি কিন্ত ওরা এখনও সরবরাহ করতে পারেনি আর এদিকে আমাকে দেখলেই হাড্ডি ওয়ালারা আমার শরীর থেকে হাড় গুলা খুলে নিতে চায়।আমরা সবাই একসাথে হেসে উঠলাম।ঐদিন রাত্রে প্রায় আটটা সাজু মামা বলল আজকে তোদের কে নিয়ে একটা কাজ করব।আমি বললাম কি কাজ?মামা বলল এখন বলা যাবেনা।রাত্রে তোদেরকে আমি ডেকে নিয়ে যাব।তোরা শুধু আমি যেটা বলি সে অনুযায়ী কাজ করবি।আমি বললাম ঠিক আছে।তোমার কথামত কাজ হবে।রাত প্রায় দুটো হবে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে।হালকা চাদেঁর আলোয় বাইরে সব কিছু মোটামুটি দেখা যাচ্ছে।আমি সাজু মামা ও আমার তিন খালাতো ভাই আস্তে আস্তে ঘর থেকে বের হলাম।এরপর সাজু মামাকে অনুসরন করে নানু বাড়ীর পশ্চিমে সমুদ্র সৈকতের পাশে খেজুর বাগানে গেলাম।নানাদের বাগানে ৮-৯টি খেজুর গাছ ছিল।সবগুলোতে কলসী ঝুলছে।সাজু মামা প্রথমে একটা গাছে উঠল আর খুব সাবধানে রস ভরা কলসীটি নামিয়ে আনলো।মামা বলল সাধু সাবধান সব রস ঢালবিনা প্রত্যেক কলসীর আধা নিবা, বাকিটা কলসীতেই থাকবে।না হলে সকালে ধরা খেয়ে যাবা।আমরা কলসীর সব রস নানিয়ে ঐ কলসীর আধেক রস আমাদের ডেক্সিতে নিলাম।এবার সাজু মামা খুব দ্রুত গাছে উঠে রসের কলসীটি আবার গাছে ঝুলিয়ে দিল।এভাবে সব গাছের থেকে কলসী গুলো নামিয়ে আমরা মামার নির্দেশ অনুযায়ী পুরো এক ডেক্সি রস সংগ্রহ করলাম।আমি মামার কাছে জানতে চাইলাম এখন কি করব।মামা বলল দাড়াও একটু ঝিরিয়ে নিই।আমরা এদিক ওদিক ঘাসের উপর বসে পড়লাম।হঠাৎ সাজু মামা বলল সবাই এদিকে এসো/কে যেন এদিকে আসছে।এই জায়গাতে থাকা যাবেনা।চল দক্ষিনে ঐ পুকুড় পাড়ে সব নিয়ে যেতে হবে।সবাই ধর ধর তাড়াতাড়ি পালাতে হবে।আমরা সবাই খেজুর বাগান থেকে পুকুড় পাড়ে চলে গেলাম।মামা বলল এবার আগুন জ্বালাতে হবে।এই দেখ মুড়ি এনেছি রসের গুড় বানাব।এরপর মামা তিনটা ইট দিয়ে চুলা বানাল।আর আমাদের বলল তোরা গিয়ে কিছু শুকনা লাকড়ি নিয়ে আয়।আমরা এদিক ওদিক দৌড়ে সবাই কিছু লাকড়ি নিয়ে আসলাম।এরিমধ্যে মামা চুলায় আগুন জ্বালিয়ে রস ভরা ডেক্সিটা চুলায় তুলে দিয়েছে।লাকড়ি দেওয়ার পর আগুন আরও জ্বলে উঠলো ।একসময় খেজুর রস ঘন হয়ে গুড়ে পরিনত হল।আমরা সবাই খুব মজা করে গুড় দিয়ে মুড়ি খেলাম।
Make sure you enter the(*)required information