চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতি এর সেতুবন্ধনে ফেসবুক
লেখক: ছাইফুল হুদা সিদ্দিকী
চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতির পুনর্মিলন ২০১৬ আয়োজন করতে গিয়ে ফেসবুক সম্পর্কে আমার দারুন এক অভিজ্ঞতা হলো। আমরা সবাই বলি আমার ফেসবুক ওয়াল(Wall) ।নতুন ধারনায় আমি বলি ফেসবুক ওয়াল বা দেওয়াল নয় চলুন সবাই বলি “ফেসবুক” সাকোঁ বা ব্রীজ বা ফেসবুক হলো আমাদের সেতুবন্ধন । ইংরেজী শব্দ (Wall) অর্থ হলো দেওয়াল যা যোগাযোগ কমায় আর দূরত্ব বাড়ায়। আর ফেসবুক যোগাযোগ বাড়ায়, বন্ধুত্ব প্রসারিত করে। নতুন নতুন বন্ধু পেতে ফেসবুক এর তুলনা শুধুই ফেসবুকেই।সেতু যেমন নদীর বা খালের দুই পাড়ের সংযোগ ঘটায় তেমনি ফেসবুক খুব সহজে শত ব্যস্ততার মাঝেও মানুষের মাঝে যোগাযোগ বাড়ায়। একই ভাবে ফেসবুক শুধু দেশে নয়, পরিচয় করে দেয় ভিন দেশী, ভিন্নভাষী অনেকের সাথে। এই অভিজ্ঞতা কোন কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়া,বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান,সন্মিলন আর সম্প্রীতির বন্ধন করে প্রকৃত অর্থে ওয়াল নয়,ফেসবুক সাকোঁ হয়ে সবার মাঝে সেতুবন্ধনের কাজ করে। এই আয়োজনে সারাদেশ তথা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে যোগাযোগের পুরো কাজটি করেছে ফেসবুক এবং ফেসবুকে ম্যাসেঞ্জার ও ইভেন্ট খোলার মাধ্যমে সময়ে সময়ে দেওয়া পরামর্শ এবং যাবতীয় পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়ন করা হয় যার ফলে খুব কম সময়ে ১০০০ (এক হাজারের) অধিক সদস্য সংগ্রহ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ১৫০০ (দেড় হাজারের) অধিক দর্শকের উপস্থিতিতে পুনর্মিলনী ২০১৬ উৎযাপিত হয় ।ভিশন ২০২১ কে সামনে রেখে এই বিশ্বায়নের যুগে তথ্য ও প্রযুক্তির সর্বত্র বিদ্যমান।বাংলাদেশকে একটি তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চায় এ দেশের সরকার ও জনগন।এলক্ষ্যে প্রযুক্তির উন্নয়নে নিরলস কাজ করে চলেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরগুলো।এরই ফলশ্রুতিতে কমপিউটার এবং মোবাইলের কল্যানে আর ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়াতে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবাই নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহার করে। বাংলাদেশের গ্রাম ভিত্তিক ওয়েবসাইটের অগ্রনী অধিকারী অঞ্চল ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমুজ্জল জনপদ চুনতি । জাতিসংঘের ইকুয়েটর ২০১২ পুরস্কার অর্জনকারী চুনতি অভয়ারণ্য যেখানে নৈসর্গিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অনুপম আধার । শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অগ্রসর চুনতি এলাকায় অবস্থিত চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় অত্র অঞ্চল ও এলাকার চারিপাশ তথা পুরো লোহাগাড়া উপজেলা ও তৎপাশে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেছে। ফেসবুক আমার দেওয়া একটা স্ট্যাটাস থেকেই এই মহামিলনমেলার শুরু হয়েছিলো ২ আগস্ট ২০১৬ ইংরেজী তারিখে যেটা ছিলো ......স্মৃতি জাগানিয়া লাল মাটির পাহাড় আর আমরা সবুজ রংয়ের ইউনিফরম পরিহিত । সেই শ্রেনীকক্ষ ,ছাত্রীদের কমনরুম, সহপাঠী বন্ধুমহল আর আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ সব মিলিয়ে সেই সোনালী সময়..। ফেলে আসা দিনগুলো ডাকে পিছনে। মনে পড়ে কি ? জীবনের সেই মধুর সময় যখন আমরা চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী ছিলাম সেই দিনগুলো। কেমনহয় প্রতিটি ব্যাচের সবাই মিলে একটা দিন সেই প্রিয় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মেতে উঠি স্মৃতিচারণে । চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীগণ কে কোথায় আছেন ? একটা মিলনমেলা কি করা যায় ? আগামি ঈদ উল আযহার পরের ২য়দিন।আপনাদের সবার সুচিন্তিত মন্তব্য , সহযোগীতা,উপদে্শ আশা করছি। এই স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীগন সবাই আন্তরিকতার সাথে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই মিলনমেলাকে আলো ঝলমল করে তুলেন। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফেজ আহমদ সাঈদ । সূচনা বক্তব্য দিয়ে একজোড়া সাদা পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন করলেন সমিতির সাবেক সভাপতি শিক্ষানুরাগী সংগঠক ও সমাজসেবক জনাব আমিন আহমদ খান জুনু মিয়াঁ । আবদ্ধ খাচাঁ থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া প্রকৃতির খোলা আকাশে শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা গুলো যখন একসাথে উড়তে উড়তে দীর্ঘ প্যান্ডেল পেরিয়ে ডানে মোড় নিচ্ছিল আর কবুতর জোড়ার নীল আকাশে মুক্ত প্রকৃতিতে ফিরে যাওয়া আর সবার মাথায় সবুজ রংয়ের এর ক্যাপ সহ অনুষ্ঠানের লাইভ ছবি ও মজার মজার স্ট্যাটাস দিয়ে ভরে উঠছিলো সবার ফেসবুক ওয়াল । সেদিন বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে যারা উপস্থিত হতে পারেনি তারাও ফেসবুক এর কল্যানে পুরো অনুষ্ঠান লাইভ উপভোগ করলো। সমিতির আহবায়ক বিশিস্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী সংগঠক মুহাম্মদ ইসমাইল মানিক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরুতে পরিবেশিত হয় হাজারো সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত। জনাব কসশাফুল হক শেহজাদ এর সঞ্চালনায় এবং জনাব ছাইফুল হুদা ছিদ্দিকীর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে মূল পর্বের শুরু । অন্যন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন ছাত্র শরিফুল ইসলাম বাহার, ইমতিয়াজ আহমেদ, হায়দার আলী বাহার, ডাঃ লোকমান, মিনহাজউদ্দিন, নাছিরউদ্দিন কবির, রবিউল হাছান আশিক, কাজী আরিফুল ইসলাম, নাসিমুল হুদা, মাহবুবুর রহমান, সাদিউল ইসলাম মুরাদ, আনোয়ার জাহান হেনা, আনোয়ার কামাল, নুরুল আবছার, বিশ্বব্যাংক এর ম্যানেজমেন্ট স্পেসালিষ্ট সুরাইয়া জান্নাত, বিদ্যালয়ের গভর্ণিং বডির সাবেক সভাপতি এরশাদুল হক ভেট্টু, সাবেক প্রধান শিক্ষক মমশাদুর রহমান, জয়দত্ত বড়ুয়া ও এইচ এম ফজলুল কাদের। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ছাত্র হামিদুল হোসাইন ছিদ্দিকী, ওয়াহিদুল হক, প্রাক্তন শিক্ষক হামিদুল হোসেন, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তাগণ বলেন ঐতিহ্যবাহী চুনতি গ্রামের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী কর্তৃক আয়োজিত এই অনুষ্ঠান সময়োচিত অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ। বক্তাগণ সমিতিকে আগামীদিনে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে অংশগ্রহণের আহবান জানান এবং সমিতির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে উপস্থিত হন চুনতির কৃতি সন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বীর বিক্রম। উপস্থিত সকলেই করতালির মধ্য দিয়ে উনাকে স্বাগত জানান ।উনি এই মিলনমেলার আয়োজকদের ধন্যবাদ দেন এবং তিনি ভবিষ্যতে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদান করবেন বলে ঘোষণা দেন।দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুরুতে না’ত পরিবেশন, স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি , এরপর শুরু হয় চমৎকার সব গান। “মেতে উঠি উৎসবে, ফিরে চলি শৈশবে” এই স্লোগানকে ধারন করে সেদিনের মিলনমেলা সাময়িক সমাপ্তি হলেও এই পুনর্মিলনীকে ঘিরে একটি আলোকিত সুন্দর দিনের অপেক্ষায় আমরা, ধীরে ধীরে আমাদের জীবনের সব খারাপ দিকগুলো বাধাঁগুলো উড়ে হারিয়ে যাবে।সব বাধাঁ কিংবা অন্ধকার ভেদ করে মানুষের জীবন হবে সুখের আলোয় ভরা ঝলমল । ফেসবুক আলাদা করার এর দেওয়াল কিংবা বাধাঁ নয়, হোক সৎপথে আলোয় ভরা ভালো ভালোয় সেতুবন্ধন ।
Make sure you enter the(*)required information