আমার পিতৃতূল্য সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন আসাতিজায়ে কিরাম, যাঁরা নিখাদ তা'লীম- তাদরীস তথা ইলম ও দরসের ঋণে চিরকালের জন্য আমাকে আবদ্ধ করেছেন, যাঁদের ঋণ কোন দিনই আমার পক্ষে পরিশোধ করার মত নয় , তাঁদের মধ্যে শীর্ষ উস্তাদ ও মহান শাইখ হলেন - শাইখুল হাদীস ওয়াত তাফসীর ওয়াল ফিকহ-হযরতুল আল্লাম জনাব মাওলানা আব্দুল হাই নিজামী (দামত বরাকতুহুম আল আলীয়া)।আমার বড় সৌভাগ্য ও গৌরবের বিষয় হলো, আমি দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চুনতী হাকিমিয়া আলীয়া মাদরাসায় হুজুরের নিকট থেকে সহীহুল বুখারী (প্রথমার্ধ), সহীহু মুসলিম (দ্বিতীয়ার্ধ), জামে আততিরমিজী (প্রথমার্ধ), তাফসীরুল বায়দাবী ও তাফসীরুল কাশ্শাফের দারস হাসিল করেছি সনদে ইযাজত তথা পাঠ দানের অনুমতি অর্জন সহকারে, আলহামদুলিল্লাহ । হুজুরের বাড়ী মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের মিঠানালা গ্রামের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুফিয়া নূরীয়া ফাযিল মাদরাসার সন্নিকটে । একটি সম্ভ্রান্ত আলেম ও পীর পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা মাওলানা আব্দুসসালাম ছিলেন একজন বড় আলেম এবং দাদা মাওলানা আব্দুল গনি মুজাদ্দেদী (মৃত্যু : ১৯৭৬) ছিলেন একজন খ্যাতিমান আলেম, মুফতি ও পীর তথা ফুরফুরা দরবারের পীর সাহেব হযরত শাহ মাওলানা আবু বকর রাহঃ এর খলিফা।ছোট কালে পিতার ইন্তেকালের কারণে দাদাই তাঁর অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন।তিনি এলাকার প্রসিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুফিয়া নূরীয়া ফাযিল মাদরাসা থেকে ফাযিল পাশ করেন । কামিল হাদীসের সনদ লাভ করেন বরিশালের ঐতিহ্যবাহী ছারছিনা আলীয়া মাদরাসা থেকে,কামিল ফিকহ এর সনদ লাভ করেন ঢাকা আলীয়া মাদরাসা থেকে এবং তদানীন্তন শিক্ষা রীতি অনুসারে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে ইন্টারের সনদ লাভ করেন ঢাকা হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ থেকে।কলেজে অধ্যয়নের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় বড় মামা ডঃ আবু বকর রফীক সাহেবের সহপাঠী।বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় ইন্টার পাশ করার পর ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে লেখা - পড়ার একান্ত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভিভাবক দাদাজানের ইচ্ছা, আগ্রহ ও নির্দেশের প্রেক্ষিতে হাদীসে রাসুল সা. এর খেদমতের উদ্দেশ্যে তিনি মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন প্রথমে পাবনা আলীয়া মাদরাসায় এবং পরে কুমিল্লা আলীয়া মাদরাসায়।চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদরাসায় কামিল শ্রেণি খোলার ক্ষেত্রে যার নাম ও অবদান চির স্মরণীয় হয়ে আছে, তিনি হলেন মাহফিলে সীরাতুন্নবী ( স ) চুনতী এর প্রবর্তক ও প্রতিষ্ঠাতা : শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ রাহঃ( শাহ সাহেব হুজুর চুনতী )। তাঁর নির্দেশে অত্র মাদরাসায় প্রথম কামিল ক্লাস শুরু করা হয় ১৯৭০ সালে।কিন্তু সমকালীন রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে কামিল ক্লাস চালু রাখা যায়নি। ১৯৭৬ সালে তাঁর নির্দেশে পুনরায় কামিল ক্লাস শুরু করা হয়।তিন জন সুযোগ্য শাইখুল হাদীসের দরসের মাধ্যমে চলছিল মাদরাসার কামিল ক্লাস।শাহ সাহেব হুজুরের বাসনা ছিল মাদরাসার কামিল ক্লাসকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশের একজন সেরা মুহাদ্দিসকে প্রধান মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগ দানের।তিনি বলেছিলেন : " চুনতী মাদরাসা খুব বড় মাদরাসা হবে।এখানে একজন বড় মুহাদ্দিস দরকার"। মাদরাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ আমার মামা ডঃ আবু বকর রফীক শাহ সাহেব হুজুরের কাছে প্রস্তাব রাখলেন তাঁর কলেজ পর্যায়ের সহপাঠী কুমিল্লা আলীয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মরত হুজুরকে অত্র মাদরাসার প্রধান মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগ দানের।তিনি এই প্রস্তাব সানন্দে গ্রহন করলেন। শাহ সাহেব হুজুরের ইচ্ছা, আগ্রহ এবং মাদরাসা কর্তৃপক্ষের অব্যাহত অনুরোধ ও যোগাযোগের ফলশ্রুতিতে শ্রদ্ধেয় হুজুর মাদরাসায় প্রধান মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন ০১-০৪-১৯৭৮ ইংরেজীতে।চুনতী মাদরাসায় প্রধান মুহাদ্দিস হিসেবে হুজুরের যোগদানের পর সুচনা হল এক নতুন যুগের।দূর - দূরান্ত থেকে ছাত্রগন এ মাদরাসায় ছুটে আসতে থাকল কামিল ক্লাসে হাদীস ও তাফসীরের জ্ঞান আহরণের জন্য।তিনি তাঁর হাজার হাজার ছাত্রদের দেখিয়ে দেন - কিভাবে হাদীস - তাফসীর পড়তে হয় ও পড়াতে হয়। কিভাবে ইলমে দ্বীন অর্জনের পাশাপাশি চরিত্র গঠন করতে হয়। ক্লাস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত পাঠ দানের মাধ্যমে তিনি প্রায়শই সমাপ্ত করেন তাঁর বিষয় সমূহের নির্ধারিত সিলেবাস।তাঁর বড় অবদান ও কৃতিত্ব হল '- তিনি চুনতী মাদরাসায় দাখিল, আলিম ও ফাযিল পরীক্ষা শেষে কর্মহীন ঘুরাঘুরি করা ছাত্রদের জন্য আয়োজন করেছেন নাহু , সরফ ও আরবী সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত শিক্ষা কোর্স। হেফজুল কুরআন সম্পন্ন কারী ছাত্রদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন শর্ট শিক্ষা কোর্স।কামিল উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালনা করেছেন হাদীস, তাফসীর ও ফিকহ এর বিশেষ কোর্স। এসব কোর্সে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়া হয়েছে সম্পূর্ণ বিনা খরচে।কামিলোত্তর প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ গ্রহন কারীদের জন্য তিনি ব্যবস্থা করেছেন বিশেষ ভাতার।কোর্স গুলোর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য তিনি গড়ে তুলেছেন বিশাল কিতাব সম্ভার।শাহ মাওলানা হাফেজ আহমদ; শাহ সাহেব হুজুর রাহঃ চুনতী - যে বড় আশা ও মহান উদ্দেশ্য কে সামনে রেখে শ্রদ্ধেয় হুজুরকে চুনতী মাদরাসার প্রধান মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগ দান করে ছিলেন, তিনি অত্র মাদরাসায় তাঁর নিরলস খেদমতের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেছেন পুরোপুরি ভাবে।তিনি এই মাদরাসায় হাজার হাজার আলেম, মুহাদ্দিস ও মুফাস্সির তৈরি করে একে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যান এবং নিজেও খ্যাতিমান হয়ে আছেন ও থাকবেন এ মাদরাসার ইতিহাসে। উল্লেখ্য,১৯৯৩সালে চুনতী মাদরাসা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করে এবং পরের বৎসর ১৯৯৪ সালে শ্রদ্ধেয় হুজুর জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের সম্মানে ভূষিত হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন।শ্রদ্ধেয় হুজুর চুনতী মাদরাসায় প্রধান মুহাদ্দিস হিসেবে দীর্ঘ ২৭বৎসর গৌরবময় শিক্ষকতার পর অবসর গ্রহণ করেন ০১-০৩-২০০৫ ইংরেজীতে। অবসর গ্রহণ পরবর্তী দুই বৎসর তিনি চুনতী মাদরাসায় হাদীসের দরসের বাইরে ছিলেন, তবে পরবর্তী সময়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সম্পূর্ণ বিনা বেতনে তাঁর সময় ও সুযোগ অনুসারে কামিল ক্লাসে দরস বহাল রাখেন।পাশাপাশি তাঁর প্রতিষ্ঠিত কিছু কোর্সের পরিচালনা ও অব্যাহত রাখেন।বর্তমানে আমাদের শ্রদ্ধেয় মুহাদ্দিসে আউয়াল সাহেব হুজুর অসুস্থ।বিভিন্ন রোগ -ব্যাধি বিশেষত কোমরের ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু দিন যাবত তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।আমার মত চুনতী হাকিমিয়া মাদরাসার হাজার হাজার প্রাক্তন ছাত্র, যারা হুজুরের দারস - তাদরীস দ্বারা অতিশয় ধন্য ও উপকৃত হয়েছেন তাদের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য হল তাঁর জন্য মহান আল্লাহর কাছে সব সময় দুআ করা ও যথাসম্ভব তাঁর খবরগিরী করা।বাব্বুল আলমীন ! ইলমুল হাদীস, ইলমুত তাফসীর ও ইলমুল ফিকহ এর এই বিশাল জাহাজকে আমাদের মাঝে বহাল রাখ , তাঁর ইলম থেকে আমাদের বঞ্চিত কর না ।■ কৃতজ্ঞতা স্বীকার : হুজুরের এই ছবিটি তাঁর অন্যতম কৃতি ছাত্র জনাব Muhammad Nurul Mohsin এর ওয়াল থেকে সংগৃহীত ।♧ শ্রদ্ধেয় হুজুর সম্পর্কিত বর্ণিত তথ্যাদি আমি নির্ভর যোগ্য সূত্র থেকে সংগ্রহ করেছি, এতদ সত্ত্বেও এখানে কোন তথ্যগত গরমিল কারো নিকট পরিলক্ষিত হলে , আমাকে জানাবেন আশা করি।
Thank you very much for this write-up. Jazakullahu Khairon. He is one of the most respected and outstanding living scholar. Extremely submissive and a perfect gentleman. Although I was not in his institutional class, I had the opportunities to interact with him in so many occasions.May Allah (SW) bless him. اللَّهُمَّ ربَّ النَّاسِ ، أَذْهِب الْبَأسَ ، واشْفِ ، أَنْتَ الشَّافي لا شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ ، شِفاءً لا يُغَادِرُ سقَماً "O Allah, Lord of mankind, do away his suffering. Heal him as You are the only Healer and there is no cure except that of Yours, it is that which leaves no ailment behind” Appreciate some more writing on him and specially on Abdur Rashid Sub Huzur.
Make sure you enter the(*)required information