চুনতি লাইট হাউজের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি যুগোপযোগী লাইব্রেরির প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি তথাকথিত কোনো শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি বিশেষায়িত যুগোপযোগী লাইব্রেরির নাম। এই একটি নামের পেছনে বেশ কিছু মানুষের অনেকগুলো স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এই নামের পেছনে অনেক বিশেষজ্ঞদের মত রয়েছে। আজকের লাইট হাউজকে যেভাবে সাজানো গুছানো রূপে দেখা যাচ্ছে সেটি এমন সাজানো গুছানো ছিলো না। এটি একদিনে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। এখন যারা ওতপ্রোতভাবে এই বাতিঘরের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছে তত বেশি সম্পৃক্ততা শুরুর দিকে হয়নি। কিছু মানুষের সুচিন্তার ফল আজকের এই চুনতি লাইট হাউজ। চুনতি লাইট হাউজের একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এটি একাধারে অনলাইন ও অফলাইন পাঠাগার। এছাড়াও চুনতির এই পাঠাগার আরো কিছু শিক্ষা বিষয়ক লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে এটি চুনতির শিক্ষাঙ্গনে সাড়া ফেলে দিয়েছে। সাড়া ফেলবেই বা না কেন? চুনতি খান ফাউন্ডেশন এই প্রতিষ্ঠানে প্রাণ সঞ্চার করছে। খান ফাউন্ডেশনের কৃতিত্ব চুনতির আপামর জন সাধারণ কখনোই ভুলতে পারবে না। চুনতির শিক্ষিত মহলের পরামর্শের দিকেও লাইট হাউজের স্বপ্নদ্রষ্টাসহ পরিচালনা পর্ষদের নজর রয়েছে৷ ইতোমধ্যে চুনতির শিক্ষিত শ্রেণিও এই লাইট হাউজের সাথে যুক্ত হয়েছেন। এই লাইট হাউজ নিয়ে ইতোপূর্বে চুনতির বিভিন্ন ফোরামে আলোচনাও হয়েছে। সবাই আশা করছে শুধু চুনতিবাসী নয় এর থেকে বিশ্বের যে-কোন প্রান্তের মানুষ উপকৃত হবে। কারণ এই লাইব্রেরির বই অনলাইন মাধ্যমেও মানুষ পড়তে পারবে। সাথে সাথে চুনতির ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি সম্পর্কেও আলাদাভাবে মানুষ জানতে পারবে। অর্থাৎ চুনতি লাইট হাউজ একটি জ্ঞানকোষ হয়ে কাজ করবে।চুনতি লাইট হাউজ নামে এই অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী লাইব্রেরি তৈরি হওয়ার আগে থেকেই চুনতির কিছু কৃতি সন্তানদের মাঝে এরকম একটি সার্বজনীন লাইব্রেরি তৈরির এমন চিন্তাধারা আমি দেখতে পেয়েছিলাম। উনাদের বিভিন্ন আলোচনায় আমি ব্যক্তিগত মতও দিয়েছিলাম। কারা এর মূল স্বপ্ন মনে লালন করেছিল, কারা এটির প্রস্তাবনা নিয়ে এর পেছনে সময় দিয়েছিলেন উনাদের কারো নাম বলে এখানে কারো প্রাধান্যকে খাটো করবো না। মূলত আমার ক্ষুদ্র জানাশোনা থেকেই চুনতি লাইট হাউজের ইতিবৃত্ত তুলে ধরার জন্য সামান্য লেখার চেষ্টা করছি। চুনতি লাইট হাউজের মতো এমন একটি পূতপবিত্র প্রতিষ্ঠানের সঠিক ইতিবৃত্ত জানা নিয়ে যাতে পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে বিতর্ক তৈরি না হয় সেজন্যই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। চুনতি লাইট হাউজের প্রতিষ্ঠার পেছনে কার্যকরী ভূমিকার কথা বললে সবার আগে চুনতির নারী আলোকবর্তীকা অত্র এলাকার পুত্রবধূ মিসেস সুরাইয়া জান্নাতের কথা না বললেই নয়। আজকে থেকে প্রায় ৪-৫ বছর আগে থেকেই এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা মাথায় আসে চুনতির কিছু শিক্ষানুরাগী মানুষের মাথায়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শ্রদ্ধেয় মামা সাহেল কিবরিয়া৷ তিনি চুনতির কয়েকজন আদর্শ শিক্ষকের মধ্যে অন্যতম। এটা জোরালো কণ্ঠে বলার কারণ হচ্ছে তিনি আমারও শিক্ষক৷ আমি জীবনে অনেক শিক্ষকের সান্নিধ্য পেয়েছি। কিন্তু আদর্শিক শিক্ষকের দিক বিবেচনা করলে হাতেগোনা কয়েকজনকেই পাওয়া যাবে। তার মধ্যে তিনি অন্যতম। ৪-৫ বছর আগে চুনতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে লাইব্রেরিটা রয়েছে সেটি প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে মামাসহ চুনতির কয়েকজন কৃতি সন্তানদের মাথায় একটি আধুনিক লাইব্রেরি করার চিন্তা আসে। তখন চুনতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাহেল মামা নিজ প্রচেষ্টায় শিশুদের জন্য বইমেলাও করেছিলেন। বইমেলাটি খুব ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও এটির গ্রহণযোগ্যতা দিনদিন বৃদ্ধি পায়। তিনি টানা দুই-এক বছর এই বইমেলা করেন। মামা আমার সাথে এসব বিষয়ে শেয়ার করতেন। একদিন মামার বাসায় ছাত্রছাত্রীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা দেখার জন্য আমাকে যেতে বলেন। আমি যাওয়ার সময় সাথে করে কিছু বই নিয়ে গিয়েছিলাম। বইগুলো বাচ্চাদের জন্য মামার ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে সংরক্ষণ করে রাখেন। যাতে উনার ছাত্রছাত্রীরা এসব বই পড়ে উপকৃত হন।বইয়ের প্রতি শিশুদের আকৃষ্ট করার জন্য পরবর্তীতে চুনতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্ভবত কোনো এক বছর ঐ বইমেলায় সুরাইয়া জান্নাত মেম পরিদর্শন করেন। লাইব্রেরি করা নিয়ে মিসেস সুরাইয়া জান্নাত মেমকে এই বিষয়ে প্রস্তাব করা হলে তিনি প্রাথমিকভাবে চুনতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে আর্থায়ন করেন। সেখানে চট্টগ্রাম রোটারি থেকেও অর্থায়ন করা হয়। চুনতির মতো একটি শিক্ষিত গ্রামে যে গ্রামকে শিক্ষা নিকেতন জোন বলা যায় এই এলাকায় একটি লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা থেকেই মূলত আজকের এই লাইব্রেরি।চুনতি লাইট হাউজের নামে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট পাবলিশ হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে www.chunatilighthouse.com চুনতি ডট কম সম্পর্কে সবাই আমরা জানি। চুনতি ডট কম যেমন চুনতির ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি এবং এলাকার একটা অনলাইন ডেটাবেজ নিয়ে সক্রিয় কাজ করে যাচ্ছে ঠিক তেমনি এই লাইব্রেরিও সক্রিয় কাজ করে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এই লাইব্রেরির পেছনে যত মানুষের শ্রম রয়েছে সকলের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রইলো। ওয়েবসাইটের তথ্যমতে নীতি কাঠামো প্রণয়নের জন্য যাদের নাম দেখছি তারা সবাই একেকজন দক্ষ সংগঠক। আশা করি উনাদের প্রত্যেকের জ্ঞান, মনন ও মেধাদ্বারা এই প্রতিষ্ঠান তার লক্ষ্য মাত্রা অতিক্রম করতে পারবে। এছাড়াও যাদেরকে উপদেষ্টা কমিটিতে দেখতে পাচ্ছি তারা শুধু বাংলাদেশের সীমারেখার মধ্যে বিশ্ব দরবারেও বহুমাত্রিক বিশেষজ্ঞের ভূমিকা পালন করছেন। আমার পরম শ্রদ্ধেয় এই মানুষদের পরামর্শক্রমে চুনতি লাইট হাউজ ইনশাআল্লাহ পরিপূর্ণতা লাভ করবে এবং এই লাইব্রেরি মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াবে। সবিশেষ চুনতি লাইট হাউজের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।কৃতজ্ঞতা স্বীকার: - তামজীদ হুসাইন
Make sure you enter the(*)required information