মোঘল বাদশা এবং ইসলামি তরিকতের বাদশা মুজাদ্দিদে আল-ফেসানী (রাহঃ) এর সাথে কিছু সামাজিক মূল্যবোধ এর অবক্ষয়ের কারণ দর্শানোর তর্কে জড়িয়ে পড়লেন। মোঘল বাদশা হুজুরকে রাষ্ট্রীয় শক্তির জোরেই বন্দী করে জনসাধারণের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন। হুজুরের মুক্তির আন্দোলন পুরো ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়লো। কিন্তু উনার একান্ত ভক্ত, খাদেম ও সহচররা ঘরে বসে থাকতে পারলেন না। কারণ হুজুর ছিল ইসলামের পথ নির্দেশনার জলজ্যান্ত আলোর মশাল। তাহার আলোর উষ্ণতা যার গায়ে লেগেছে সেই জানে। সেই উষ্ণতা যে কতই মধুর! হুজুরকে মুক্ত করে উনার সান্নিধ্যে থাকা ছিল তাদের জীবনের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। এক পর্যায়ে আন্দোলনের তীব্রতা বিদ্রোহী হতে বাধ্য করলো। হুজুরের একজন একান্ত খাদেমকে বন্দী করে হুজুরের সাথে প্রেরণ করা হয়। যখন কারা প্রহরী কারাগারের দরজা বন্ধ করছিল তখন উক্ত খাদেম বলতে লাগলেন " হায়! হুজুরের সান্নিধ্যে থাকার আনন্দ যদি মোঘল বাদশা জানতো তাহলে ভারতবর্ষের বাদশাহী ছেড়ে এখানেই চলে আসতো"। মুরশিদের সান্নিধ্যেই মানব মন পূর্ণ প্রশান্তি লাভ করে। তেমনি পরিপূর্ণ মনের প্রশান্তি লাভ করার সুযোগ হয়েছিল মুজাদ্দিদে বাণীয়ে সিরাতুন্নবী (সঃ) হযরত শাহ হাফেজ আহমদ (রাহঃ) প্রকাশ চুনতি শাহ সাহেব কেবলা (রাহঃ)'র ভক্ত, খাদেম ও সহচর বৃন্ধের। তাদের মধ্যে অন্যতম শাহ সাহেব কেবলা (রাহঃ)'র মামাতো ভাই জান্নাতবাসী শ্রদ্ধেয় মরহুম এরশাদুল হক সাহেব। তিনি বিনয়ী, নিঃস্বার্থ, স্মার্ট, কোমল অন্তরের, মিষ্টবাসী, সবার জন্য ভালোবাসায় ভরপুর, নিরহংকারী ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। চুনতির সামাজের প্রতিটি মানুষই আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। শাহ সাহেব হুজুরের প্রতিটি কাজে সকলের সম্পৃক্ততা থাকলেও একান্ত সান্নিধ্য লাভ করার সুযোগ হয়েছিল খুব কম এলাকাবাসীর। এরশাদ দাদার সরল, বিনয়ী ও নিরহংকারী অন্তর শাহ সাহেব হুজুরের উপর পূর্ণ আস্থা ও ভালোবাসায় টইটম্বুর ছিলো । জীবনের শুরু থেকেই শাহ সাহেব হুজুরের সান্নিধ্যেই কাটিয়েছেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে। শাহ মনজিলের একান্ত সদস্য হিসেবে নিজের অবস্থানে ও সান্নিধ্যে থেকে যাবতীয় কর্মকাণ্ডে সার্বক্ষণিক নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিয়োজিত রেখে প্রয়োজনীয় আনজাম দিতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।এরশাদ দাদার নিঃস্বার্থ, সততা, দূরদর্শী, স্মার্ট ও মিষ্টভাষী স্বভাব শাহ সাহেব হুজুরের যোগ্য সহচররূপে সবার কাছে সমাদৃত হয়েছিলেন। উনি একাধারে শাহ সাহেব হুজুরের আত্মীয়, ভক্ত, খাদেম ও চুনতিবাসির প্রতিনিধি রূপে হুজুরের ছায়াসঙ্গী হিসেবে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সিরাত মাহফিলের বিশাল আয়তনে মাঠ তৈরির ও মসজিদে বাইতুল্লাহ এর যাবতীয় আর্থিক লেনদেনের সিংহভাগই উনার হাতে সম্পাদিত হয়েছিল। উনার ব্যক্তিত্ব ও হুজুরের ছায়াসঙ্গীর বদৌলতে তদানীন্তন সরকারের রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রীবর্গ, উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমান, রাষ্ট্রপতি আবদুস সত্তার, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আতিকুর রহমান, জিয়া সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী সফিউল আজম, বিচারপতি সিদ্দিক আহম্মেদ, প্রধান উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন নুরুল হক, জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, ডাঃ নুরুল ইসলাম, ডাঃ শরীফ, সেনাবাহিনীর অফিসার, উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, বিচারপতি, বিশিষ্ট আলেম, অধ্যাপক, ইসলামী চিন্তাবিদ, সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা , শিল্পপতি, ব্যবসায়ীসহ সকলের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। উনি উক্ত সম্পর্ককে পারিবারিক সম্পর্কে উন্নয়ন করে শাহ মনজিলের সাথে সেতুবন্ধন রচনা করেছিলেন। উনার মৃত্যু পরবর্তী শাহ মনজিল ও চুনতি সিরাত মাহফিলের সাথে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈষয়িক সম্পর্কের অপূরনীয় ক্ষতি, যা এখনো কাটানো সক্ষম হয়নি। উক্ত সম্পর্ক বজায় রেখে সিরাত মাহফিলের নতুন বক্তা, অতিথি ও গুণীজনদের আমন্ত্রণ দিয়ে হুজুরের সাথে তাহাদের পরিচয় করার সুযোগ করে দেন এবং মাহফিলে আগত শ্রোতাদের হৃদয়কে করেছেন প্রানবন্ত। অন্যদিকে মাহফিলের জিয়াফত বিভাগের যাবতীয় সরকারি অনুমতি আদায়ে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছিলেন। মূলত এরশাদ দাদা শাহ সাহেব হুজুরের বৈষয়িক সম্পর্কের নীরব রক্ষাণাগার হিসাবে কাজ করেছিলেন। আজ জুলাই মাসের ২৭ তারিখ, আজ থেকে ৩১ বছর আগে, ১৯৮৯ সালে ঠিক এই সময়ে সন্ধ্যা ৭টায় আমার এরশাদ দাদা মৃত্যুবরণ করে ছিলেন। পরিবারের জন্য ১০,০০০/- টাকার খরচকৃত কৃষিঋণ ও নিজের পকেটে রেখে যাওয়া ২৭ টাকা! শাহ সাহেব কেবলা (রাহঃ)’র যোগ্য ছায়াসঙ্গী হিসেবে বিরল ইতিহাস রচনা করে গেছেন। যার সাথে সম্পৃক্ততা বাংলাদেশের প্রথম সারির ধনাঢ্য পরিবার সমূহের। উনি চাইলেই নিজের ও পরিবারের স্বচ্ছল ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবন ছিলো উনার হাতের মুঠোয়। মহাবিশ্বের মালিক আল্লাহু জল্লে শানেহু যেন হযরত মরহুম শাহ হাফেজ আহমদ (রাহঃ) প্রকাশ চুনতির শাহ সাহেব কেবলা মুজাদ্দিদে বাণীয়ে সিরাতুন্নবী (সঃ) এর একান্ত ছায়াসঙ্গী হিসাবে কবুল করুন। শাহ মনজিল সহ উনার সকল আত্মীয় স্বজনদের ইসলামের পতাকাতলে থাকার তৌফিক দান করুন।প্রফ রিড়ারঃ ফারিয়া মরিয়াম
Make sure you enter the(*)required information