গত ৯ জানুয়ারি সৌদি আরবে বাংলাদেশের সঙ্গে হজের চুক্তি হয়ে গেছে। সম্প্রতি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু হয়েছে। এখন সম্মানিত হজযাত্রীগণ সরকারি ব্যবস্থাপনায় হলে সরকারি নিয়ম-নীতি মতে এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হলে যে হজ এজেন্সিকে প্রথম কিস্তির টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাকি টাকা প্রদানের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবেন। দেশে অল্পসংখ্যক লোকই সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করেন। বাকি ৯০ শতাংশের অধিক লোক বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজ করে থাকেন।হজের ব্যয় গত কয়েক বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। করোনার আগে ২০১৯ সালে ইকোনমি প্যাকেজ ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজারের কম-বেশি। গত বছর তা বেড়ে এই ইকোনমি প্যাকেজে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম-বেশি দাঁড়ায়। চলতি বছর আগামী জুন মাসের হজে সাকল্যে ৭ লাখ বা এর কম-বেশি খরচ পড়তে পারে। যেহেতু হজের প্যাকেজ বাদে কোরবানিসহ কিছু আনুষঙ্গিক খরচ থাকে।হজ ফরজ ইবাদত। মুসলমানের ইমানের পর চার ফরজের মধ্যে এক ফরজ হজ। তবে হজ ফরজ হবে একাধিক শর্ত সাপেক্ষে। আর তা হলো—(১) হজের আর্থিক সামর্থ্য থাকতে হবে, (২) শারীরিক সক্ষমতা থাকতে হবে, (৩) যাতায়াতে অনুকূল পরিবেশ থাকতে হবে। বর্তমানকালে যাতায়াতব্যবস্থা অনুকূল তো বটেই, বিমানে আছে আরামদায়ক ব্যবস্থা। মাত্র ছয়-সাত ঘণ্টায় বাংলাদেশ থেকে জেদ্দা বা পবিত্র মদিনায় পৌঁছা যায়। হজের পর বিমানে মাত্র ছয়-সাত ঘণ্টায় দেশে ফিরেও আসা যায়। অপর দুই শর্ত বর্তমানকালেও বলবত্।করোনার আগে হজের প্যাকেজ সময় ছিল ৪০-৫০ দিনের মধ্যে। গত বছর হজযাত্রীর সংখ্যা অর্ধেকেরও কম থাকায় তা ৩৫ দিন বা এর কম-বেশিতে নেমে আসে। মূলত বাংলাদেশের বিমানে তাদের এয়ারক্রাফেটর সংখ্যা কম থাকায় হজ প্যাকেজে সময় বাড়ছে। যেহেতু যাদের আগে নিয়ে যাবে, তাদের আগে ফেরত আনবে।কাফেলা এজেন্সিকে আপনি প্রথম কিস্তির টাকা দিয়েছেন মাত্র। বাকি টাকা দেওয়ার পূর্বে আলাপ-আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান। এতে আপনাকে পবিত্র মক্কায় কাবা শরিফ ও পবিত্র মদিনায় মসজিদে নববি থেকে কত দূরে রাখবে, কোন মানের দালানে রাখবে, আপনার কক্ষে কত জন থাকবেন, তিন বেলা খাবারের মান কী রকম হবে, তা ঠিক করে নিন। হজের সফর ইবাদতের সফর। যাতে হজ করতে গিয়ে কাফেলা এজেন্সির সঙ্গে মনোমালিন্য বা তিক্ততা না হয়, সে ব্যাপারে এখন থেকেই সতর্ক হোন।বিমান বা সৌদি এয়ারে যাতায়াত, পাঁচ দিনব্যাপী হজ কার্যক্রমে প্রায় সব হজযাত্রীর একই নিয়ম। এখানে বড় কোনো ব্যবধান আছে বলে মনে করি না। শুধু দুই পবিত্র নগরীতে ঘরের দূরত্ব, মান, কক্ষে কত জন থাকবেন, খাবারের মান ইত্যাদি খরচের তারতাম্য হতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে এজেন্সিপ্রধানের সঙ্গে সরাসরি আলাপ করাই উত্তম।হজ তিন প্রকার। তন্মধ্যে কেরান ও তামত্তো হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে দমে শুকরিয়া ওয়াজিব। অর্থাত্, একটি ছাগল বা দুম্বা আর উট বা গরু হলে সাত ভাগের এক ভাগ। এ ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে আপনার দমে শুকরিয়া যথাযথভাবে হলো কি না।এখন থেকে হজে গমনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া আবশ্যক। আপনার এলাকায় আগে হজ করা বিজ্ঞ ব্যক্তি থাকলে তার কাছ থেকে অনেক কিছু জেনে নিতে পারেন। হজের সফরে তাওয়াফ ও সায়ির দোয়া এবং পবিত্র মদিনায় জিয়ারতের তরতিব নিয়ে আমাদের দেশে অনেক ছোট ছোট পুস্তিকা ছাপানো আছে। এখানে দোয়া পড়া শর্ত না হলেও এসব দোয়া পড়তে পারাটা অতীব উত্তম। একাধিক বিজ্ঞ আলেমের সমন্বয়ে ও সহযোগিতায় লিখিত ‘তাওয়াফ ও জিয়ারত’ নামে আমার পুস্তিকাটিও বিনা হাদিয়ায় রাখতে পারেন। ০১৭১৩-১১৫৬০১ নম্বরে কল দিলে যত কপি লাগে, কুরিয়ার সার্ভিসে বিনা হাদিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিংবা সরাসরি ইত্তেফাকের ধর্মচিন্তা বিভাগেও যোগাযোগ করা যেতে পারে।লেখক :সভাপতি, হজযাত্রী কল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রামসুত্র ঃ শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, দৈনিক ইত্তেফাক
Make sure you enter the(*)required information