।। জীবনের লক্ষ্য ।।মানুষের জীবনের লক্ষ্য প্রতিনিয়ত বিবর্তিত হতে থাকে। জীবনের শিশুকাল হতেই ছেলে-মেয়ে ভেদাভেদে জীবনের প্রাথমিক লক্ষ্য নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এক্ষেত্রে পরিবারের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি এই লক্ষ্য নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে থাকে। সচরাচর দেখা যায় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শিশুদের জীবনের লক্ষ্য হয়ে থাকে গাড়ির ড্রাইভার/হেলপার হওয়া, বাড়ির দারোয়ান/কেয়ারটেকার হওয়া, স্কুল/অফিসের দপ্তরী হওয়া, দোকানের কর্মচারী হওয়া, চিকিৎসকের সহকারি হওয়া ইত্যাদি। অনুরূপভাবে দেখা যায় ঘরের গৃহকর্মী মেয়েটি ঐ ঘরের মালিকের মেয়ে শিশুর জীবনের প্রথম আদর্শ ব্যক্তি হয়ে থাকে। এ কারণে প্রায় শতভাগ মেয়ে শিশু জীবনের প্রথম হাঁটাচলা শেখার সাথে সাথে ঝাড়ু নিয়ে মেজে পরিষ্কার করবে আর বাসন-গ্লাস ধোয়া, কাপড় কাচার চেষ্টা করবে। অবশ্য বয়স বাড়ার সাথে সাথে ও জীবনের বাস্তবতা শেখার প্রারম্ভে এই প্রাথমিক লক্ষ্যের পরিবর্তন ঘটে। কেউ কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ শিক্ষক, কেউ সমাজসেবক/আইনজীবী, ব্যাংকার ইত্যাদি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকে। অবশ্য এ সময়ে তারা সমকালীন সামাজিক পরিস্থিতি বুঝতে শুরু করে, পরিবারের অপেক্ষাকৃত বেশি সচেতন ও শিক্ষিত সদস্যের পরামর্শ পেতে শুরু করে, যা তাদেরকে সমকালীন সমাজের একটি উপযুক্ত পেশা লক্ষ্যস্থির পূর্বক সেই মোতাবেক শিক্ষাজীবন বেছে নিতে সাহায্য করে (বর্তমান যুগে তো পেশার কোন শেষ নেই ! তথ্য প্রযুক্তির ভার্চুয়াল ব্যবসা ও চাকরি পেশার মাত্রাকে অকল্পনীয়ভাবে প্রভাবিত করেছে)। অবশ্য আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় job oriented শিক্ষা ব্যবস্থা তেমন কার্যকর নয়, যে কারণে ডাক্তারিতে পড়াশোনা করেও কেউ কেউ পুলিশ হচ্ছে, ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছে, সাধারণ সাবজেক্টে পড়াশোনা করে ব্যাংকার হচ্ছে !!এবার ব্যক্তিগতভাবে আমার জীবনের বিষয়ে একটু আলোকপাত করি। আমি বড় হয়েছি বন্দর এলাকায়। এখানে জাহাজের আনাগোনা দেখেছি, ট্রেনের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখেছি, ট্রাকের চলাচল দেখেছি। এগুলো দেখে গাড়ির ড্রাইভার , ট্রেনের লোকো মাস্টারের চাকুরী খুব রোমাঞ্চকর মনে হতো..... ইচ্ছা হতো লম্বা কন্টেইনার লরিগুলো চালিয়ে এক শহর হতে আরেক শহরে দাবড়িয়ে বেড়াবো। ট্রেনের ইঞ্জিন চালক হয়ে প্রকৃতির মাঝে লৌহ চাবুক চালিয়ে প্রকৃতিকে দ্বিখন্ডিত করে হুইসেল বাজিয়ে হু হু করে এক প্রান্ত হতে আরেক প্রান্তে ইস্পাতের লাইনের উপর দাপিয়ে বেড়াবো। কোন এক সময় স্কুলের দপ্তরি হওয়াটাও বেশ ভালো মনে হতো। স্কুলের ঘন্টা বাজানোকে এক সময় মনে করতাম সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী একটি কাজ। আর দপ্তরিকে সবচেয়ে শক্তিশালী মনে করতাম! চিন্তা করতাম, তার বাজানো ঘন্টা ধ্বনিতে শিক্ষকরা ক্লাসে যোগদান করছে, ক্লাস ছেড়ে বের হচ্ছে.... ছেলেমেয়েরা রোবটের মত ক্লাসে ঢুকেছে, বের হচ্ছে...... কত শক্তিশালী একটি মানুষ, আহহহহহ !!! পরে প্রকৃত তিতা চিত্রটি বুঝতে পারলাম 🙁 তবে চরম বাস্তবতায় এখন তাকে দুর্বল একটি চরিত্র বলে অভিহিত করা হলেও আমার মতে দপ্তরির চরিত্র শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মনে রাখার মতো মুহূর্ত। অবশ্য শিক্ষা জীবনের একপর্যায়ে নিউক্লিয়ার ও এষ্ট্রো ফিজিক্সের প্রতি আমার দুর্নিবার আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল।আমি যদি সমাজের, দেশের বা বিশ্বের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হতাম, তবে আমার গ্রাম বা আমার নিজ এলাকা অথবা আমার চলার পথে পাওয়া যে কোনো স্কুলের পাশে থেমে ঐ স্কুলে উপস্থিত হয়ে স্কুলটির দপ্তরি হতে ঘন্টার হাতুড়িটি চেয়ে নিয়ে যে কোন একটি ক্লাসের ঘন্টা বাজাতাম ! আমার মতে সমাজের বিশিষ্টজনেরা মাঝে মাঝে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে উপস্থিত হয়ে ঘন্টাধ্বনি বাজাতে পারেন (অবশ্য গেস্ট শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নেয়ার বিষয়টিও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ যা আমি আমার ইতিপূর্বেকার নিবন্ধতে বলেছি)। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ধারণায় নিজেদের উদ্বুদ্ধ করতে পারবে, সমাজের সকল স্তরের পেশার প্রতি সম্মান দিতে শিখবে। আর ঐ মহান বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আপাত দৃষ্টিতে নিজেদেরকে সমাজের তথাকথিত নিচু স্তরে নামিয়ে আনলেও শিক্ষার্থীদের কোমল হৃদয়ে বিপরীতভাবে উচ্চতর স্তরে আসীন করে নিতে পারবেন।কারো জীবনে সুনির্দিষ্ট ও সাথে বিকল্প কয়েকটি লক্ষ্য থাকবে অথবা থাকতে হবে। এটি কারো ক্যারিয়ার গড়ে তোলার মূল পূর্ব শর্ত। অতএব যে কারো জীবনের লক্ষ্য বাস্তবতার নিরিখে সময়োপযোগী হওয়া প্রয়োজন। ওয়াহিদ আজাদ ; ২৯-০৫-২৩
Make sure you enter the(*)required information