গাউছুল ইসলাম টুনু বদ্দা ছিলেন অত্যন্ত অমায়িক জন। চলনে বলনে আচারে ব্যবহারে তিনি ছিলেন অনন্য। বড় ছোট ধনী গরীবে কোন পার্থক্য করেননি কোনদিন।
সত্তুর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি এবং তাঁর চাচা শশুর মরহুম মোস্তাক আহমদ (পেয়ারা মিয়া) চাকুুরী করতেন সত্তার ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে। তখন চুনতির অনেকেই পাহাড়ে পশু শীকারে যেত যার ব্যতিক্রম ছিলামনা আমরাও। বেশী শীকার করতাম হারবাং এলাকায়। আসা যাওয়ার পথে অনেকবার সত্তার ম্যাচের অফিসে তাঁর ও পেয়ারা মিয়া চাচার আতিথ্য গ্রহণ করতাম। তৎকালে তিনটি বড় কারখানা থাকার সুবাদে আজিজ নগর ছিল মুখরিত এলাকা। চুনতি ও তৎসংলগ্ন এলাকার বেশীরভাগ লোক কাজকরতেন আজিজ উদ্দিন লিঃ ছত্তার ম্যাচ ও রয়েল টেক্সটাইল মিলে। দক্ষিণদিকে যাওয়া আসার প্রাক্কালে অনেকবার গাউছ বদ্দাকে মোটর সাইকেলে আনানেওয়া করেছি যা এখনো মনে পড়ে।
তিনি ছিলেন তুখোড় ফুটবল খেলোয়াড়। ফুটবলে পাকিস্তান আমল হতে স্বাধীনতার প্রথম দশক পর্যন্ত চুনতি আঞ্জুমান ই নওজোয়ান ছিল চট্টগ্রামে অপ্রতিরোধ্য। দক্ষিণ চট্টগ্রামে ফুটবলের বড় টুর্ণামেন্টে চুনতি আঞ্জুমান, আজিজ উদ্দিন লিঃ, ছত্তার ম্যাচ ও গ্যাস কোম্পানির মত দলগুলো থাকত অবশ্যই। কর্পোরেট দলগুলোতে চট্টগ্রাম ও ঢাকার নামীদামী খেলোয়াড়রা খেললেও আঞ্জুমানে খেলতেন স্থানীয় খেলোয়াড়রা। তৎকালের প্রথিতযশা খেলোয়াড় জ্যাকব, এয়ার মোহাম্মাদ, বিজয়, শান্তলাল, টুটুল, অমলেশ, ইব্রাহীম খলিন, মোজাম্মেলদের মত অনেক খেলোয়াড়রা এসব টুর্ণামেন্টে খেলতেন। এসব খেলোয়াড়দের সাথে পল্লাদিয়ে আঞ্জুমান অনেক শিরোপা জিতে। সেই স্বর্ণযুগে চুনতির খেলোয়াড়দের মাঝে গাউছ বদ্দা, বশির হাক্কু, এহতেশাম বদ্দা, কাঞ্চু মামা, আব্দুল মাবুদ বদ্দা, আব্দুল ওহাব বদ্দা, শুক্কুর বদ্দা, রোকন বদ্দা, ইকবাল বদ্দা, অদু মামা, ফজল বদ্দাদের খেলা এখনো স্পষ্ট মনে আছে।
ছত্তার ম্যাচ বেসরকারি খাতে ছেড়েদিলে ভাইয়া গ্রুপ বছর দশেক চালানোর পর বন্ধ হয়েযায়। ভাইয়া গ্রুপ মালিকদের সাথে সুসম্পর্কের কারণে আশির দশকে গাউছ বদ্দা টুকটাক সাপ্লাই করতেন। কিছুদিন পর তিনি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেন। আমার দেখা এটিই ছিল তাঁর কর্মময় জীবন। সারাজীবন সততা ও নিষ্ঠার সাথে পার করেছেন। সাধারণ ও গরীব দুঃখীদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন সাধ্যমত। সৎপথে ছিলেন বলে তাঁর ছেলেরা শিক্ষাদীক্ষা সহ সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজ সামাজিক উন্নয়ন সহ গরীব দুঃখীদের অকাতরে সেবার সুযোগ পেয়েছে। মহান আল্লাহ উত্তম জযা দানকরুক।
ঐতিহ্যবাহী চুনতি মুন্সী বাড়ীর সন্তান মরহুম গাউছুল ইসলাম ছিলেন মরহুম ইরতেজা আলীর দ্বিতীয় পুত্র। তাঁর বড়ভাই মরহুম তাউছুল ইসলাম ছিলেন দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধি। ছোটভাই মরহুম এহতেশামুল হক ছিলেন তুখোড় ফুটবল খেলোয়াড়। তাঁর সহধর্মিণী ছিলেন চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা এসএসসি ব্যাচ ও প্রখ্যাত শিল্পী বুলবুল চৌধুরীর ভাতিজি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব জেনারেল জয়নুল আবেদীন ছিলেন তাঁর ছোট ভায়রা।
গাউছ বদ্দার তিন ছেলেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। প্রথম পুত্র সাদিউল ইসলাম মুরাদ, এফসিএ, কনফিডেন্স সল্ট লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে আছেন।
Make sure you enter the(*)required information